জুবায়ের চৌধুরী

  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

ফেসবুক-ইউটিউবে বিভ্রান্তিকর তথ্যে নজরদারি

দেশে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ফেসবুক-ইউটিউব। দিনের বেশির ভাগ সময়ই এই দুটি মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকেন অনেকে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তা ব্যবহার করে নিত্যনতুন অপরাধও বাড়ছে। সাইবার জগতের অপরাধ এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের অধিকাংশের প্রযুক্তিগত জ্ঞানই নেই। ফলে ফেসবুক-ইউটিউবকে ঘিরে সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে।

এই অপরাধের বড় অংশই হচ্ছে কাউকে হেয় করে ছবি, মন্তব্য বা পোস্ট। শুধু কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য নয়, ফটোশপে কারসাজি করে বানানো আপত্তিকর ছবি দিয়েও হেয় করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে হেয় করতে মিথ্যা ও ভুয়া খবরও ছড়ানো হয়। এ রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠেকাতে ফেসবুক-ইউটিউব নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর এসব গুজব-উসকানি ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে সাইবার পুলিশ।

সস্তা জনপ্রিয়তা ও ভিউ বাড়াতেই নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে ইউটিউব কনটেন্ট নির্মাতারা। এসব ভিডিও কন্টেন্টে ব্যক্তিবিশেষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহুল জনপ্রিয় পণ্য সেবা কিংবা প্রতিষ্ঠান। কোনো নামিদামি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে প্রকাশ করলেই সেগুলো ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব ভিডিওর সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তা দেখছেন এবং শেয়ার দিচ্ছেন। আর এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টাকা আয় করছে তথাকথিত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের মালিকরা।

নামিদামি কোম্পানির নামে সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ভিউ বাড়িয়ে নিজেরা লাভবান হলেও ক্ষতির শিকার হয় দেশীয় শিল্প। ক্ষুণ্ন হয় দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম। এমনকি এসব বিভ্রান্তিকর ভিডিও দেখে ব্যবহারকারী বা ভোক্তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হয় দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তাই ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর ভিডিও প্রকাশের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা বলছেন, ভিউ বাড়িয়ে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবের মাধ্যমে টাকা আয়ের উপায় হিসেবে নামিদামি কোম্পানির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ভিডিও বানিয়ে সেগুলো প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। আর এসব ভিডিও সাধারণ মানুষ দেদার দেখছে এবং শেয়ার দিচ্ছে। কিন্তু যারা এসব ভিডিও প্রকাশ করছেন, তারা অনেকেই জানেন না তাদের এসব ভিডিওর কারণে নামিদামি কোম্পানির ?সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মীর মোদাচ্ছের হোসেন জানান, সম্প্রতি মোনায়েম গ্রুপের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়, তাদের প্রতিষ্ঠান ইগলু আইসক্রিমের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর ভিডিও বানিয়ে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে দেখা গেছে, একটি চক্র ভিউ বাড়ানোর জন্য বিভ্রান্তিকর ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে। উদ্দেশ্য ভিউ বাড়িয়ে ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা। কিন্তু তাদের এমন বিভ্রান্তিকর ভিডিওর কারণে একটা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যেমন সুনাম ক্ষুণ্ন হয় তেমনি, চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে একটি শিল্পকে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

তিনি আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনায় ফোরএস নামে একটি ফেসবুক আইডি ও ইউটিউব আইডি শনাক্ত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পেজটির অ্যাডমিন সালমান সজীব নামের এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর সালমান জানান, তারা শুধু ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশে এমনটি করেন। তাদের কখনো ভাবনায় ছিল না যে, এ ধরনের ভিডিওতে একটা শিল্প কিংবা কোম্পানি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এ জন্য তিনি অনুতপ্ত।

এদিকে গত বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে সাইবার পুলিশ সেন্টার। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি বিশেষায়িত এই ইউনিটটি বেশ দক্ষতার সঙ্গে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ডেটা চুরি ও তথ্যপ্রবাহে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে বহুসংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ মোকাবিলা করে সাইবার পুলিশ সেন্টার। সাইবার ক্রাইম অপারেশন ও ইনভেস্টিগেশন, সাইবার ক্রাইম সার্ভিলেন্স ও পেট্রোলিং এবং সাইবার ক্রাইম সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য কার্যকরী ভূমিকা রয়েছে এই ইউনিটের।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নজরদারি,ভিডিও,ফেসবুক,ইউটিউব,বিভ্রান্তিকর তথ্য,সাইবার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close