জুবায়ের চৌধুরী
শুদ্ধি অভিযান
দেড় শতাধিক ব্যক্তি দুদকের জালে
ক্যাসিনোকাণ্ড, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, ঘুষ ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে জোরেশোরে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের হুইপ, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য, ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি ও তাদের প্রতিষ্ঠানের আমলনামা হাতে নিয়ে তদন্ত করছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।
তবে প্রতি মাসেই অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা বড় হচ্ছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে গঠিত সাত সদস্যের একটি চৌকস অনুসন্ধান টিম এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তদন্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত এসব ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সার্বিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
দুদকের তথ্য মতে, চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর র্যাব রাজধানীর ফকিরাপুল ও মতিঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনো ও জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগে যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েক নেতাকর্মীকে আটক করে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। দুদক প্রথমে ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনার কথা জানায়। পরে এই তালিকা বাড়তে থাকে। বর্তমানে দুদক দেড় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৪ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলেন, ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতির ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকের লকার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে থাকা সব ধরনের সম্পদের ওপর নজরদারি হচ্ছে। এ তালিকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তালিকায় সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন জনের নাম রয়েছে। এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করা হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। বিষয়টি জানার পরই এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে দুদকের মহাপরিচালক দফতর থেকে বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পুরো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
যাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে দুদক : জানা গেছে, অভিযুক্তের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ভোলার সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, বরিশালের পংকজ দেবনাথ, নারায়ণগঞ্জের নজরুল ইসলাম বাবু, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ও হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জের মোয়াজ্জেম হোসেন, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগ নেতা ও ‘টেন্ডার কিং’ জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান।
এছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার ও তার স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লেক ভিউ প্রোপার্টিজ ও রাও কনস্ট্রাকশন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, তার স্ত্রী সানজিদা রহমান, তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান টি-টোয়েন্টি ফোর গেমিং কোম্পানি লিমিটেড ও টি-টোয়েন্টি ফোর ল ফার্ম লিমিটেড, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান ও তার স্ত্রী এবং তাদের প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রিন লাইন লিমিটেড; যুবলীগ নেতা মুরসালিন আহমেদ, তার বাবা-মা ও স্ত্রী, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই ও তার স্ত্রী, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী ও তার স্ত্রী, বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, শওকত উল্লাহ, প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, রোকন উদ্দিন, আবদুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদুল ইসলাম।
অন্যদের মধ্যে রয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার, আফসার উদ্দিন মাস্টার, আয়েশা আক্তার, শামীমা সুলতানা, শেখ মাহামুদ জোনায়েদ, মো. জহুর আলম, এস এম আজমল হোসেন, ব্রজ গোপাল সরকার, শরফুল আওয়াল, জার্মানে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান, ওমান পলাতক আরেক সন্ত্রাসী নাদিম, মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির জাকির, নয়াটোলার সেন্টু, বাড্ডার নাসির, বনানী গোল্ড ক্লাবের মালিক ব্যবসায়ী আবদুল আওয়াল, ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন মিয়া, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল হক ভূইয়া, ঢাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাতেনুল হক ভূইয়া, হারুনুর রশীদ, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম, শিক্ষা অধিদফতরের ঠিকাদার মো. শফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম রবিউল ইসলাম সোহেল।
অন্যদিকে নোয়াখালীর মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোংয়ের মালিক-ঠিকাদার জামাল হোসেন, পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মালিক-ঠিকাদার মিনারুল চাকলাদার, সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের মালিক-ঠিকাদার রেজোয়ান মোস্তাফিজ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান, যুবলীগ নেতা গাজী সরোয়ার বাবু, গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু, নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের, নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মোমিন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, বান্দরবানের সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা সেন্টারের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন, পরিচালক জামিল উদ্দিন শুভ, পরিচালক এস এইচ এম মহসিন, পরিচালক উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, পরিচালক জিয়া উদ্দিন আবীর, পরিচালক যাওয়াদ উদ্দিন আবরার, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদ, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী জিয়া, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, ঠিকাদার তবিবুল হক তামিম, শাহেদুল হক ও তার স্ত্রী সাবিনা তামান্না হক।
তালিকায় আরো রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঈনুল হক মঞ্জু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা কামরান প্রিন্স মোহাব্বত, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আতিয়ার রহমান দীপু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন খান, সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরী, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কায়সার আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী, কমলাপুর আইসিডির কমিশনার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার কানিজ ফারহানা শিমু, সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তুহিনুল হক, টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলম এবং গণপূর্ত সার্কেল-৪, ঢাকার উপসহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর হোসেন।
পিডিএসও/হেলাল