জুবায়ের চৌধুরী

  ২৭ অক্টোবর, ২০১৯

দুর্নীতিবিরোধী বড় অভিযান আসছে

চলমান ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ঘিরে আরো বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। দিন যত যাচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের তালিকাও বড় হচ্ছে। এই অভিযান গিয়ে ঠেকবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলেও। বিগত দশ বছরে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে যারা অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন, তারাই রয়েছেন এই অভিযানের টার্গেটে। ইতোমধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থা সেক্টরভিত্তিক দুর্নীতিবাজদের তালিকা করেছে। তালিকায় মন্ত্রী-এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিক ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তি রয়েছেন। তাদের অবৈধ সম্পদের তথ্য এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে।

সূত্র জানিয়েছে, অভিযানের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সংসদের অন্তত ছয় সদস্যের নাম। যুবলীগের অন্তত দুই ডজন নেতার আমলনামা রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। প্রাথমিকভাবে তাদের সম্পদের হিসাব ও উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজনীতিক ছাড়াও সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এ তালিকায় রয়েছেন। এদিকে, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনোর শত শত কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারার সঙ্গে প্রশাসনের কোন স্তরে কারা জড়িত সেই অনুসন্ধান চলছে। দেশের বাইরে কোন চ্যানেলে কীভাবে টাকা পাচার করা হয়েছে, তা নিয়েও কাজ করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

কয়েকজন এমপিসহ ২৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : ভোলার এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নারায়ণগঞ্জের নজরুল ইসলাম বাবু, সুনামগঞ্জের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, চট্টগ্রামের শামসুল হক চৌধুরীসহ ২৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নোটিস জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। আর নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুর ব্যাংক হিসাবসহ সব সম্পদের তথ্য চেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তালিকায় রয়েছেন বরিশালের একজন বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য, যিনি বরিশালের বরগুনার একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডে আলোচনায় আসেন। আছেন ঢাকার মিরপুর থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। জবর-দখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে।

এক মাসে অর্ধশতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ : ক্যাসিনো কারবারের মাধ্যমে অবৈধভাবে আয় ও কর ফাঁকির অভিযোগে গত এক মাসে ৬০-এর বেশি ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জব্দ করা হয়েছে তাদের কর ফাইলও। এদিকে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে প্রভাবশালী অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন এনবিআরে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি রিপোর্ট অনুসারে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

আরো যারা আছেন তালিকায় : গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তার ভাই যুগ্ম সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান, লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী নাবিলা লোকমান, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার। এনামুল হকের সহযোগী ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আজাদ রহমান, জাকির এন্টারপ্রাইজের মালিক জাকির হোসেন ও শফিক এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম।

তৃণমূল থেকেও বাদ পড়ছেন বিতর্কিতরা : আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের পর এবার তৃণমূল পর্যায়ের কমিটি থেকেও বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাসংবলিত চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। এটি সম্প্রতি শুরু হওয়া ‘শুদ্ধি’ অভিযানের অংশ বলে দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে বলা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজারবাইজানের বাকু যাওয়ার আগে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এ নির্দেশনা দেন। পরে ওবায়দুল কাদেরের সই করা চিঠি সাংগঠনিক জেলা ও মহানগরে পাঠানো শুরু হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর কারণে তৃণমূলের নেতারা চিঠি পেতে দু-তিন দিন লাগবে।

ঢাকার কাউন্সিলররা আতঙ্কে : ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের অনেক কাউন্সিলর। বাসায় গিয়ে তাদের খোঁজ করলে বলা হচ্ছে অফিসে। অফিসে গিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। দলীয় নেতাকর্মী, অনুসারীরাও বলতে পারছেন না তারা কোথায় আছেন। সিটি করপোরেশনমুখীও হচ্ছেন না তারা। ফোনে কল দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। গত ২০ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বোর্ড মিটিংয়ে ১০০ কাউন্সিলরের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৮৬ জন। কম উপস্থিতির জন্য চলমান অভিযানকেই কারণ হিসেবে দেখছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে র‌্যাব ১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে গ্রেফতারদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জড়িতরা নজরদারিতে রয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দুর্নীতিবিরোধী অভিযান,অবৈধ সম্পদ,ক্যাসিনো
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close