চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২৬ অক্টোবর, ২০১৯

মধ্যপ্রাচ্য থেকেই ৩ সন্ত্রাসীর চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি!

গ্রেফতার ৫ জন

দুই বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানো তিন ‘সন্ত্রাসী’ সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম সেখানে বসেই চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির চক্র চালাচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় বন্দরনগরীর বায়েজিদ বোস্তামির ওয়াজেদিয়া এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য।

বিদেশে থাকা তিন সন্ত্রাসীর হয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে চট্টগ্রামে গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার ওই পাঁচ যুবক হলো মো. রুহুল আমিন (২১), মো. তুহিন ওরফে তুফান (২৮), আবদুল কাদের সুজন (২৯) মো. জাবেদ ওরফে ভাগিনা জাবেদ (৩১) ও রায়হারন আহমেদ রনি (২০)।

তাদের কাছ থেকে পাঁচটি এলজি, পাঁচ রাউন্ড কার্তুজ, ছুরি ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে বলে মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (বায়েজিদ বোস্তামি জোন) পরিত্রাণ তালুকদার জানিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার তিনি বলেন, এরা সন্ত্রাসী সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের হয়ে বায়েজিদ বোস্তামি, অক্সিজেন, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিল।

পরিত্রাণ তালুকদার জানান, সম্প্রতি ফোন করে দুই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জানতে পারে, সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম মধ্যপ্রাচ্য থেকেই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে। এই তিনজনের মধ্যে সরোয়ার ও ম্যাক্সন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘ক্যাডার’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে। পরে চট্টগ্রাম পুলিশের করা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীর’ তালিকায় তাদের নাম আসে। আর একরামের পুরো নাম ইমতিয়াজ সুলতান একরাম। তিনি চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রী তাসফিয়া হত্যা মামলার পলাতক আসামি।

২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নুরুন্নবী ওরফে ম্যাক্সন ও চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সরোয়ার ও গিট্টু মানিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। বর্তমানে ভারতের কারাগারে বন্দি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে একসময় পরিচিত ছিল সরোয়ার ও ম্যাক্সন। পরে তাদের সম্পর্কের অবনতি হলে কারাগারে থাকা শিবিরের আরেক সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হয়ে উঠে তারা।

২০১৩ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাজ্জাদের সঙ্গে সরোয়ার ও ম্যাক্সনের দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠলে নাছিরকে চট্টগ্রাম থেকে কাশিমপুর কারাগারে এবং সরোয়ার, ম্যাক্সনকে চট্টগ্রাম কারাগারের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয় বলে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য।

প্রায় ছয় বছর কারাগারে থাকার সময়ও সরোয়ার ও ম্যাক্সন তাদের অনুসারীদের দিয়ে বায়েজিদ এলাকায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ করত এবং তাদের হয়ে ইমতিয়াজ সুলতান ওরফে একরাম ‘মাঠের তদারকি’ করত বলে স্থানীয়দের ভাষ্য।

বায়েজিদ বোস্তামি থানার পরিদর্শক প্রিটন সরকার বলেন, ২০১৭ সালে কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে কাতারে চলে যান সরোয়ার ও ম্যাক্সন। আর তাসফিয়া হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর একরামও কাতারে পাড়ি জমান।

এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গত ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদা দাবি করে সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরাম। তাদের হয়ে চাঁদাবাজির কাজটা করত গ্রেফতার ওই যুবকরা। তাদের কথামতো চাঁদা না দেওয়ায় ২৩ সেপ্টেম্বর নয়াহাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে।

পরিদর্শক প্রিটন বলেন, ওই ব্যবসায়ী থানায় কোনো অভিযোগ না করলেও পুলিশ এর তদন্ত শুরু করে। সম্প্রতি উজ্জ্বল দেওয়ানজী নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের নামে চাঁদা দাবি করে।

তদন্তে দেখা যায়, কাতারে থাকা সরোয়ার, ম্যাক্সন ও একরামের নির্দেশে উজ্জ্বলের কাছে চাঁদা চায় রুহুল আমিন। তার খোঁজ পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। জাবেদ ও তুহিনের বিরুদ্ধে আগের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। অস্ত্রসহ গ্রেফতার ও চাঁদাবাজির ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চট্টগ্রাম,সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজি,চাঁদাবাজি চক্র
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close