পাবনা ও বেড়া প্রতিনিধি

  ০৯ জুলাই, ২০১৯

সওজের শতকোটি টাকার সরকারি জমি বেহাত

বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের পাশে বেড়া সিএন্ডবি স্ট্যাকইয়ার্ডের শত কোটি টাকা মূল্যের ১৫ বিঘা আয়তনের ভূসম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পাবনা সওজ বিভাগের ওই ভূসম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। সেখানে তারা দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। স্ট্যাকইয়ার্ডের ভেতরে প্রায় চার বিঘা আয়তনের একটি পুকুর বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া স্ট্যাকইয়ার্ডে হাটবাজার বসিয়ে হাজার হাজার টাকা খাজনা তুলে সরকারি খাতে জমা না দিয়ে সেই টাকা নিজেরাই ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন অবৈধ দখলদাররা।

পাবনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগ এবং সীমান্ত এলাকার সামরিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৬০ সালে বেড়ার নগরবাড়ী থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ১৯৬২ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সড়ক নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য নগরবাড়ী-দিনাজপুর সড়কের কোলঘেঁষে বেড়া সিএন্ডবি বাসস্ট্যান্ডের উত্তর-পূর্ব পাশে প্রায় ১৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে সেকশনাল অফিস স্থাপন করে।

পরে সেকশনাল অফিসটি কাশিনাথপুরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত সেকশনাল অফিসটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান স্ট্যাকইয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। মহাসড়কের পাশে শত কোটি টাকা মূল্যের এই ভূসম্পত্তির ওপর নজর পড়ে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির। তারা পাবনা সড়ক বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগসাজশে ২০১০ সালে স্ট্যাকইয়ার্ডের স্থাপনাসহ ১৫ বিঘা আয়তনের ভূসম্পত্তি দখল করে নেয়।

এছাড়া নগরবাড়ী-বগুড়া-দিনাজপুর মহাসড়কের বেড়া সিএন্ডবি ইছামতি ব্রিজের পূর্ব-দক্ষিণপাশে চতুর বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পাবনা সড়ক বিভাগের প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের এক বিঘার বেশি জমি এক ব্যক্তি দখলে করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করে অনেক দোকান ভাড়া দিয়েছেন। এদিকে সওজের এক শতাংশ জায়গা ২৪ লাখ টাকায় বেচাকেনা করা হয়েছে। সেই জায়গায় বিল্ডিং নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি, ১৯৬০ সালে সড়ক নির্মাণকালে জমি অধিগ্রহণ করে মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়েছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ অধিগ্রহণকৃত জমি খারিজ না করায় আরএস রেকর্ড জমির সাবেক মালিক বা তাদের ওয়ারিশদের নামে হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, ওই জমির মালিক তারা। জমির প্রকৃত মালিকানা সড়ক ও জনপথ বিভাগের।

জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ২০১০ সালের ডিসম্বর মাসে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেড়া স্ট্যাকইয়ার্ডটি দখল করে নেয়ার পর তারা স্ট্যাকইয়ার্ডের ভেতরের একটি সেমি-পাকা ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে ফেলা হয়। সেখানকার বেশ কয়েকটি বড় বড় মেহগনি গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়া হয়। এছাড়া স্ট্যাকইয়ার্ডের ভেতরে অবস্থিত চার বিঘা আয়তনের একটি পুকুর বালি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। বিশাল আয়তনের ওই ভূসম্পত্তিতে অনেক দোকান ও গুদাম নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন সকাল-বিকাল বাজার এবং প্রতি সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। হাট-বাজার থেকে খাজনা তুলে সরকারি খাতে জমা না দিয়ে সংশ্লিষ্টরা ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। এদিকে বেদখল হয়ে যাওয়া মূল্যবান এই ভূসম্পত্তি উদ্ধারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সওজের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেড়া সিএন্ডবি চতুরবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি হাট সম্প্রসারণের কথা বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিশাল বিশাল ছাপড়া ঘর তৈরি করে অর্ধশতাধিক পেঁয়াজের আড়ৎ বসিয়েছে। বেশকিছু হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফার্নিচার কারখানা, ওয়েলডিং কারখানা, গোখামার, মাছবাজার, মুদি দোকান, কাঁচামালের কয়েকটি আড়ৎসহ ৩০টির বেশি টং দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার স্ট্যাকইয়ার্ডে অবৈধভাবে পাট, পেঁয়াজ, গাছের চারা, ফার্নিচার, রিকশাভ্যানসহ নানা পণ্য বিক্রি হাট বসে। হাটে-বাজরে আগত ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। পরে সেই খাজনার টাকা সংশ্লিষ্টরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়া হয়। পুকুর ভরাটের সঙ্গে সওজের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশ ছিল বলে বেড়া সিএন্ডবি চতুরহাটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।

এদিকে নগরবাড়ী-বগুড়া-দিনাজপুর মহাসড়কের বেড়া ইছামতি ব্রিজের পূর্বপাশে চতুর বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ৭ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় এক বিঘা জমি এক ঠিকাদার অবৈধভাবে দখলে নিয়ে টিনের ঘর তুলে ভাড়া দিয়ে আসছিল। পরে সেই টিনের ঘর ভেঙে বিশাল মার্কেট নির্মাণ করে অনেক দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকা শত কোটি টাকা মূল্যের ভূসম্পত্তি উদ্ধারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কিংবা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।

পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানান, বেড়া স্ট্যাকইয়ার্ডের জায়গা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়নি। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে এই জায়গা দখল করে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা করছে। এ ব্যাপারে পাবনা সওজ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে চিঠি দিয়ে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের জন্য পাবনা জেলা প্রশাসককে অনুরূপ অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারি সম্পত্তি দখলবাজদের হাতেই আছে। কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সরকারি জমি,পাবনা,বেড়া,অবৈধ দখল,সড়ক ও জনপথ (সওজ)
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close