reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ মে, ২০১৯

সুন্দরী তরুণীর ভয়ংকর ফাঁদ

যে কারও প্রথম দেখাতেই আটকে যাবে চোখ। দেখতে রূপবতী। হাল-ফ্যাশনের পোশাক পরনে। সব মিলিয়ে মোহনীয় উপস্থাপনা এই তরুণীর। বয়স ২৫ কিংবা ২৬ বছর। শরীরে জড়ানো অলংকার আর ব্রান্ডের ঘড়িই বলে দেয় কতোটা অত্যাধুনিক তিনি।

এসব উপস্থাপন শুধুমাত্র লোক দেখানো। এসবের আড়ালেই এই তরুণী করেন চোরাকারবারি। নানান ধরনের সাজ-সজ্জায় নিজেকে সাজিয়ে কৌশলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার কিংবা জিনিসপত্র। আর এসব করতে নিজের নাম বদলিয়ে কখনো হয়েছেন তানি, আবার কখনো এ্যানি। সুনিপুণ হাতে এসব লাখ টাকার কাজ করতে গিয়ে কখনো হয়েছেন ডা. নওশীন, কখনোবা তানিয়া আক্তার।

ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বেশ কয়েক বছর ধরে নির্বিঘ্নে চোরাকারবারি চালিয়ে যাচ্ছিলেন গাজীপুরের মেয়ে তানিয়া।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (উত্তর) অভিযান চালিয়ে তানিয়াকে আটক করে। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় তার বিশ্বস্ত সহযোগী দুলালী, আফসানা, আসিফ এবং গাড়িচালক কালামকে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. গোলাম সাকলায়েন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেপ্তারের সময় তানিয়ার ব্যাগ থেকে প্রায় ৬ ভরি স্বর্ণালংকার (যার মূল্যমান প্রায় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা), নগদ টাকা এবং চুরির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই তরুণীর নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বাসা-বাড়িতে গিয়ে স্বর্ণ চুরির ১৩টি মামলা রয়েছে।

পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অবস্থিত আবাসিক হোটেল, পার্টি সেন্টারগুলোতে হরহামেশাই এমন সুন্দরী ও রুপসী নারীদের আনাগোনা। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম তানিয়া। কারণ তার উপস্থিতির পেছন থাকে আরেক উদ্দেশ্য। মূল লক্ষ্য থাকে ধনী কোনো ব্যক্তিকে টাগের্ট করে তার বাসা-বাড়িতে ঢুকে সর্বস্ব লুটে নেওয়া।

সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার দুটি বাসায় স্বর্ণালংকার এবং নগদ অর্থ চুরি ঘটনায় রাজধানীর ভাটারা থানায় দুটি মামলাও হয়েছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশের এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুটি বাসাতে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে এই চুরি হয়েছে। প্রথম বাসার বাড়িওয়ালার ছেলের বন্ধুর মাধ্যমে আগে একবার ওই বাসায় গিয়েছিলেন তানিয়া। ওই সময়েই টার্গেট করেন তিনি। এরপর সময়-সুযোগ বুঝে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে বাসায় প্রবেশ করেন। প্রথমে ওই বাসার বিভিন্ন সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।

বাসাতে প্রবেশের সময় দারোয়ানকে তানিয়া বলেন, তিনি ডাক্তার এবং বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের মেয়ের বান্ধবী। এরপর ভিতরে প্রবেশ করেন তানিয়া। কিন্তু বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে বাড়িওয়ালার কাছে অভিনব আরেক কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি। বলেন, তিনি ওমান থেকে এসেছেন, তার কাছে থাকা বেশ কিছু ডলার রাখার মতো নিরাপদ জায়গা না থাকায় এখানে এসেছেন। প্রথমে রাজি না হলেও একপর্যায়ে বাড়িওয়ালা (বৃদ্ধ) আলমারি খুলে দেন সেগুলো রাখার জন্য। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তানিয়া নগদ টাকা ও বাড়িওয়ালার মেয়ের রাখা স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেন। এভাবে নানা কৌশল অবলম্বন করে চোরাকারবারি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তানিয়া।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, সাধারণত চুরি করতে যাওয়ার সময় তানিয়া তার বিশ্বস্ত এক উবারচালক কামালকে বিষটি আগে ফোন দিয়ে জানাতেন। এরপর চালক কামালকে আরেক সহযোগী আসিফ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকতেন বিভিন্ন পয়েন্টে। তানিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অনুচর হলো দুলালী ও আফসানা। এই দুলালী এবং আফসানাই সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসাবে তানিয়ার সঙ্গে থাকতেন। আফসানাও গাজীপুরের মেয়ে। চুরি করে নিয়ে আসা স্বর্ণগুলো বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তানিয়া মূলত কাজে লাগান এই আফসানাকে।

পিডিএসও/রি/মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সুন্দরী তরুণী,ভয়ংকর ফাঁদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close