reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ মে, ২০১৯

চলন্ত বাসে তানিয়াকে গণধর্ষণের আলামত মিলেছে

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে মৃত্যু হওয়া নার্স শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়াকে (২৪) গণধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। সংগ্রহ করা আলামত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মেডিকেল টিম।

প্রাথমিকভাবে তারা জানিয়েছেন, মৃত্যুর কিছু সময় আগে শাহিনুর গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তিন সদস্যের এই মেডিকেল দলের প্রধান কিশোরগঞ্জ জেলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা সজিব কুমার।

কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত মেয়েটি গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আরও কিছু ধাপ বাকি আছে। বাকি পরীক্ষাগুলো দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তখন চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ধর্ষণের প্রাথমিক আলামত পাওয়ার কথা উল্লেখ করে পুলিশের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’

শাহিনুরকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে বাজিতপুর থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি করেন শাহিনুরের বাবা গিয়াস উদ্দিন। মামলার এজাহারে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

যে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের নুরুজ্জামান নুরু (৩৯), একই জেলার বীর ওজোলী গ্রামের লালন মিয়া (৩৩), বেঙ্গাবদি গ্রামের আল আমিন (২৮) ও বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৭)। চারজনের মধ্যে পুলিশ নুরুজ্জামান ও লালনকে গ্রেপ্তার করেছে। নুরুজ্জামান বাস চালক আর লালন চালকের সহকারী। আল আমিনও চালকের সহকারী এবং ঘটনার রাতে তিনি শাহিনুরকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আবদুল্লাহ আল মামুন পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। মামুন পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি পিরিজপুর বাজারের একজন ইজারাদার।

এ মামলায় পাঁচজনের প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আল মামুন এই আদেশ দেন।

বাজিতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সারোয়ার জাহান আদালতে তাদের প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চাকরি করতেন তানিয়া। গত সোমবার বিকেলে তিনি রাজধানীর এয়ারপোর্ট কাউন্টার থেকে টিকিট নিয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনে ওঠেন। স্বর্ণলতা বাস মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। বিকেলে বাসে ওঠার পর থেকে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কথা বলেন তানিয়া। রাত ৮টার দিকে তিনি যখন মঠখোলা বাজার অতিক্রম করেন, তখন মুঠোফোনে বাবাকে জানান, আধা ঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছাতে পারবেন। তার বাবা তখন এশা ও তারাবির নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলেন।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন তানিয়া। ভাইকে তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আর মাত্র পাঁচ-সাত মিনিট লাগবে পিরিজপুর পৌঁছাতে।’ কিন্তু কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে বাসের যাত্রীরা নেমে যায়। তবে গাড়িচালক ও হেলপার কৌশলে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে তার সঙ্গে চার-পাঁচজনকে যাত্রীবেশে গাড়িতে তোলেন। কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড পার হয়ে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী ভৈবর-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের গজারিয়া জামতলী নামক নির্জন জায়গায় ওই নার্সকে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করে এবং গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করে বলে স্বজনরা ধারণা করছেন।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
চলন্ত বাস,তানিয়া,গণধর্ষণ,আলামত
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close