প্রেমিকা সেজে অপহরণের ভয়ংকর ফাঁদ
সুন্দরী মেয়েদের ছবি দিয়ে ফেসবুক আইডি। সেখান থেকে ব্যবসায়ীসহ পেশাজীবীদের টার্গেট করে বন্ধুত্ব, ব্যক্তিগত নম্বর সংগ্রহ।
এরপর মুঠোফোনে আলাপ শুরু, ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্ক গভীর করে ডেটিংয়ের আমন্ত্রণ। আসার পর প্রেমিককে অপহরণ করে মোটা অংকের মুক্তিপণ আদায়। এভাবেই প্রতারণার ভয়ঙ্কর ফাঁদ পাততেন কাজল বেগম (২৬) ও তার সঙ্গীরা।
চক্রটি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিভিন্ন কৌশলে পেশাজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল।
বুধবার রাতে সাভারের আমিনবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের ৫ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৪। উদ্ধার করা হয়েছে অপহৃত রায়হান নামের এক ব্যক্তিকে।
আটকরা হলেন- আজিজুল হাকিম (৪০), লিটন মোল্লা (২৬), কাজল বেগম (২৬), নজরুল ইসলাম বাবু (৪২) ও নুরু মিয়া ওরফে মোল্লা (৬২)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।
তিনি বলেন, ‘চক্রটি ধনাঢ্য অবিবাহিত পুরুষদের টার্গেট করে বিভিন্ন কৌশলে অপহরণ করতো। তারপর তাদের হাত-পা বেঁধে পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতো। অন্যথায় ভিকটিমকে খুন করার হুমকি দিতো।’
ভুক্তভোগী রায়হানকে অপহরণের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ফেসবুকে রায়হানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে অপহরণ চক্রের সদস্য কাজল। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। গত ১২ এপ্রিল কথিত প্রেমিকা কাজলের সঙ্গে ডেটিং করতে কলাবাগান থেকে প্রাইভেটকারে ওঠেন রায়হান। সেটি কাজলেরই পাঠানো গাড়ি।
পরে সাভারের আমিনবাজারের একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে রায়হানের হাত ও চোখ-মুখ বেঁধে ৬ দিন ধরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অপহরণকারীরা।
রায়হানকে মারধরের শব্দ, কান্না-চিৎকার শুনিয়ে তার পরিবারের কাছে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে এবং মুক্তিপণের টাকা না দিলে খুন করার হুমকি দিতে থাকে। শেষ পর্যায়ে ৫ লাখ টাকা চুক্তি হয়।
র্যাব-৪ এর সিও মঞ্জুরুল জানান, যে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রায়হানের পরিবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তার সূত্র ধরে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করা হয়।
তিনি বলেন, চক্রটি শুধু প্রেমের ছলে নয়, বিভিন্ন কৌশলে গত ১০ বছর ধরে এভাবে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছিল। ঢাকাসহ আশপাশের বাসস্টেশন থেকে চক্রটি যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে মাইক্রো বা প্রাইভেটকারে উঠিয়েও অপহরণ করতো।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
পিডিএসও/রি.মা