তুহিন আহমদ, মহানগর (সিলেট)

  ১২ এপ্রিল, ২০১৯

সিলেটে হাত বাড়ালেই ইয়াবা!

ফাইল ছবি

সিলেটে হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা বড়ি। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়রাই ইয়াবার কড়াল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিলেই মিলছে ইয়াবা। বিশেষ করে নগরে ইয়াবা বড়ির ভাসমান বিক্রেতার সংখ্যা রয়েছে বেশি। এমনকি দ্রুত টাকা কামানোর লোভেই এই অসাধু পন্থা অবলম্বন করছেন মাদক কারবারিরা।

ইয়াবা বড়ির মরণনেশা থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর না হলে মাদকের ভয়াবহতা সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

সিলেট নগরের বাইরে ও সীমান্তবর্তী এলাকা কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, ওসমানীনগর, বিয়ানীবাজার হয়েই মূলত ইয়াবা আসছে। এছাড়াও সিলেট নগরের কাষ্টগড় ও দক্ষিণ সুরমাও ইয়াবার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের অভয়ারণ্য। প্রায়ই ওইসব এলাকা থেকে ইয়াবা বড়িসহ ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা গ্রেফতার হচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বিশেষ কৌশলে ইয়াবা বিক্রি করছে চোরাকারবারিরা। নগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন বিক্রেতারা। মোবাইল ফোনে অর্ডার পেলে ওই স্থানে গিয়ে ইয়াবা পৌঁছে দিয়ে বিক্রির টাকা নেয়। এরা খুবই সাবধানতার সঙ্গে কাজ করে থাকে। এমনকি এসব বিক্রেতা একই স্থানে বেশি দিন অবস্থান করেন না। অনেক ক্ষেত্রে অপরিচিত কোনো ক্রেতার সঙ্গে আলাপে যান না এসব বিক্রেতা।

সিলেটে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ইয়াবা চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক দম্পতিও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। গত মঙ্গলবার ১০০ পিস ইয়াবাসহ দুই নারীকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে সিলেটের শাহপরাণ থানা পুলিশ দেলোয়ার হোসেন নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব-৯ ও বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ছোট চালানের ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা বিক্রেতাদের গ্রেফতার করেছে।

মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে প্রতি সপ্তাহেই গ্রেফতার হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ ইয়াবা বিক্রেতারা। এরা বিশেষ কৌশলে ইয়াবা বিক্রি করে আসছেন। এমনকি সর্বশেষ রুমী আক্তার ও লাবণী আক্তার নামের দুই নারী ব্যবসায়ীকে পুলিশ ক্রেতা সেজে আটক করে। এরা দীর্ঘদিন থেকে নগরের বালুচর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া করে ইয়াবা বড়ি ব্যবসা করে আসছিলেন।

মহানগর পুলিশ আরো জানায়, সিলেটের প্রতিটি থানাতেই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা রয়েছে। এদের ধরতে পুলিশ নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এসব তালিকায় কতজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে তা জানাতে রাজি হয়নি পুলিশ।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মূসা বলেন, ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। শুধু ইয়াবা নয়, যে কোনো ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ শূন্য সহনশীলতায় রয়েছে। সিলেটে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে মাদক আসছে। এদের রুখতে কাজ করে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

৪৮ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর লে. কর্নেল শাহ আলম চৌধুরী বলেন, ইয়াবা বড়িসহ সব ধরনের মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সব সময় কঠোর অবস্থানে রয়েছি। সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনামূলক ক্যাম্পেইন করা হয়। সীমান্ত দিয়ে আগের তুলনায় মাদক পাচার অনেকাংশে কমে এসেছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুধু ইয়াবা বিক্রি নয় সব ধরনের মাদক ব্যবসায়ীদের আমরা শাস্তি দাবি করি। নতুবা এর ভযাবহতা সমাজকে ধংস করে দিতে পারে। মাদকের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইয়াবা,সিলেট,মাদক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close