রাজশাহী ব্যুরো

  ১১ জানুয়ারি, ২০১৯

‘অটোরিকশার জন্য জয়কে জবাই করে বন্ধু জসিম’

ইনসেটে নিহত অটোরিকশা চালক জসিম উদ্দিন জয়

‘রাজশাহী মহানগরীর বড়বনগ্রাম মাস্টারপাড়া মহল্লার অটোরিকশা চালক জসিম উদ্দিন জয়কে তার সবচাইতে কাছের ঘনিষ্ট বন্ধু (নামের মিলে মিতা) জসিম চাকু দিয়ে জবাই করে। এ সময় তার অপর বন্ধু সুমন হাত-পা ধরে ছিল। সে সময় বাঁচার জন্য জসিম উদ্দিন জয় অনেক আকুতি মিনতি করলেও মন গলেনি প্রিয় বন্ধু জসিমের। শুধুমাত্র অটোরিকশার জন্যই মাদক সেবন করিয়ে নেশায় বিভোর হয়ে উঠলেই জয়কে (২০) জবাই করা হয়। আর যেন তাকে কেউ শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য জয়ের মুখমণ্ডল ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া হয়।’

শুক্রবার দুপুরে নগরীর শাহমখদুম থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) শাহমখদুম ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হেমায়েত উল্লাহ।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু, রক্ত মাখা পোশাক ঘটনাস্থলের পাশ থেকে ও ছিনতাই হওয়া অটোরিকশাটি নাটোরের আহমদপুরে অবস্থিত আসামি জসিমের ভগ্নিপতির বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সে সময় জসিমের ভগ্নিপতি পলাতক থাকায় আটক করা সম্ভব হয়নি বলেও জানান ডিসি। প্রেস ব্রিফিংকালে হত্যায় জড়িত আটককৃত তিনজনকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিসহ উদ্ধারকৃত আলামত প্রদর্শন করা হয়। নিহত জসিম উদ্দিন জয় মহানগরীর বড়বনগ্রাম (মাস্টারপাড়া) এলাকার আরকান আলীর ছেলে।

মামলার উদৃতি দিয়ে শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ জানান, গত বুধবার রাতে গোদাগাড়ী উপজেলার সরমংলা এলাকা থেকে জসিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ৭ তারিখ আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে ভাড়া মারার উদ্দেশ্যে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। এরপর বিকেল ৫টা থেকে জয়ের মুঠোফোন বন্ধ পায় তার পরিবার। এরপর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে জয়ের চাচাতো মামা ৮ জানুয়ারি শাহমখদুম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরে তদন্তকালে শাহমখদুম থানা পুলিশ জানতে পারে, মামলার ১ নং আসামি মহানগরীর শাহমখদুম থানাধীন শেখপাড়া বড়বনগ্রাম এলাকার আবুল কালামের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৩) ও ২ নং আসামী গোদাগাড়ী থানার মাটিকাটা গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে সুমন আলী (২৬) গত ৭ জানুয়ারি আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শাহমখদুম থানাধীন নওদাপাড়া বাস টার্মিনালের সামনে থেকে অটোরিকশাসহ জয়কে গোদাগাড়ী নিয়ে গেছে। তখন এই দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে শাহমুখদুম থানা পুলিশ।

পরে তাদের দেওয়া স্বীকারক্তি অনুযায়ি গোদাগাড়ী থানাধীন জলাহার এলাকার একটি পুকুর পাড়ের জঙ্গলের ভেতর থেকে জয়ের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩ নং আসামি গোদাগাড়ীর মাটিকাটা গ্রামের মরিফুলের ছেলে রাজিবকে (২৫) আটক করা হয়। আসামি জসিম উদ্দিন ও সুমন আলী রাজশাহী মহানগরীর একটি খাবারের হোটেলের কর্মচারী।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত জসিমের বাবা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। প্রেসব্রিফিং শেষে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে তিনজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করায় তাদের রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি।

এদিকে, আসামিদের কঠোর শাস্তির দাবিতে বুধবার বিকেলে মহানগরীর আমচত্বর এলাকায় মানববন্ধন করা হয়। পরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আসামি জসিমের মুরগীর পরিত্যাক্ত খামারে আগুন ধরিয়ে দিলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রায় আধাঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।

প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে শাহমখদুম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তারিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (এসি) হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পিডিএসও/অপূর্ব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অটোরিকশা,জয়,জবাই
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close