নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ অক্টোবর, ২০১৮

গ্রামীণফোনের ভয়াবহ জালিয়াতি : গ্রেফতার ২

করপোরেট গ্রাহকের নিবন্ধিত সিম অপরাধীদের হাতে!

একেকটি সিমের মূল্য ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা!

ব্যক্তিপর্যায়ে সিম কেনার ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও বায়োমেট্রিক প্রয়োজন। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে করপোরেট সিম ইস্যু করতে শুধু সংশ্লিষ্ট একজনের নামেই প্রয়োজনীয় সবগুলো সিম রেজিস্ট্রেশন করা হয়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বাড়তি সিম ইস্যু করে বাইরে বিক্রি করে আসছিল গ্রামীণফোনে কর্মরত একটি চক্র।

মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোনের এক কর্মকর্তা ও পরিবেশকের যোগসাজশে গড়ে ওঠা এ চক্রের সরবরাহ করা সিমগুলো পৌঁছে যেত অপরাধীদের হাতে। আর এসব সিম ব্যক্তিভেদে ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে গ্রামীণফোনে এমন ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। র‌্যাবের তদন্তে ৪০টি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নম্বরের সঙ্গে অতিরিক্ত সিম বিক্রির তথ্যও উঠে এসেছে।

র‌্যাব জানিয়েছে, একটি অপরাধী চক্রকে গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামে র‌্যাব-৪-এর একটি দল। ফরিদপুরের ভাঙা আর বরিশালের একটি এলাকায় দুটি অপরাধী গ্রুপের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এই অপরাধীদের ধরতে মোবাইল ফোনের নম্বর ট্র্যাকিং শুরু করে র‌্যাব। নম্বর ট্র্যাকিং করতে গিয়ে র‌্যাব জানতে পারে, গ্রামীণফোনের ওই নম্বরটি ঢাকার একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের নামে রেজিস্ট্রেশন করা।

র‌্যাব গভীরভাবে তদন্ত করে দেখে, ওই প্রতিষ্ঠানটি যে কটি সিমের আবেদন করেছে, সেই কটি সিম কার্ডই নিয়েছে এবং ব্যবহার করছে। তাহলে অপরাধীর হাতে ওই সিমগুলো কীভাবে গেল? সেই তদন্ত করতে গিয়ে গ্রামীণফোনের ভয়াবহ জালিয়াতির তথ্য পায় র‌্যাব। গ্রামীণফোন ওইসব করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নম্বর দেওয়ার পর অতিরিক্ত কিছু নম্বর নিজেদের কাছে রেখে দেয়। যে নম্বরগুলো পরে অপরাধীদের কাছে বিক্রি করা হয়।

এমন ভয়ংকর জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত শনিবার রাতে মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রামীণফোনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (বিজনেস সেলস) সৈয়দ তানভীরুর রহমান (৩৫) ও পরিবেশক তৌফিক হোসেন খান পলাশকে (৩৮) গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। তাদের কাছ থেকে ৫৫৩টি নিবন্ধিত সিম, বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ ও নয়টি ট্যাব জব্দ করা হয়।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির জানান, গ্রামীণফোনের দুটি নম্বর থেকে এক শ্রীলঙ্কান নাগরিকের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর ভাষানটেক থানায় জিডি হয়।

পরে তদন্তে উঠে আসে নম্বরগুলো মাইক্রোকডেস ইনফরমেশন নামে একটি কোম্পানির নামে রেজিস্ট্রেশন করা, যা তৌফিক হোসেন খান পলাশের মালিকানাধীন মোনাডিক বাংলাদেশ নামে একটি ডিসট্রিবিউশন হাউসের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। আর এই ডিসট্রিবিউশন হাউসের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন গ্রামীণফোন কর্মকর্তা তানভীরুর। মাইক্রোকডেস ইনফরমেশন কোম্পানির অনুমতি ছাড়াই সিমগুলো অ্যাকটিভ করা হয়েছে-এমন তথ্যের ভিত্তিতে তৌফিক ও তানভীরুরকে আটক করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর বিভিন্ন তথ্য।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব-৪ অধিনায়ক জানান, তারা বিভিন্ন বৈধ কোম্পানির নামে প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি সিম ইস্যু করত। তারপর সেগুলো ব্যক্তিগতভাবে লাভের আশায় বাইরে উচ্চমূল্যে বিক্রি করত। এসব সিম সাধারণত অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী ও অপরাধীরা ব্যবহার করে। প্রাথমিকভাবে ৪২টি কোম্পানির অধীনে ৮৬৭টি অবৈধ সিম সচল থাকার প্রমাণ মিলেছে। তৌফিক সিমগুলো বিভিন্ন কোম্পানির নামে ইস্যু করে ক্লিয়ারেন্স পাঠাতেন আর তানভীরুর সিমগুলো সচল করতেন। সচল ৮৬৭টি সিম কোথায়, কে ব্যবহার করছেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গ্রামীণফোন,করপোরেট সিম,জালিয়াতি চক্র,র‌্যাব
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close