শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মাদক পাচারে গাড়ির ভুয়া রেজিস্ট্রেশন!

মাদক পাচার বা পরিবহনে কোনো গাড়ির সম্পৃক্ততা পেলে সেটি জব্দ করা হয়। তখন অপরাধে সহযোগিতা করার অভিযোগে আসামি হতে হয় ওই গাড়ির মালিককেও। কিন্তু এই দায় থেকে রেহাই পেতে এক মাদক কারবারি ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে গাড়ি কিনে নিবন্ধন করেছেন বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।

গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন ওয়াজেদিয়া এলাকায় একটি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ৬৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় মিজানুর রহমান, জসিম উদ্দিন ও কাজী আবুল বাশারকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্য মতে, একই দিন রাতে ১০ লাখ টাকাসহ আবদুল্লাহ আল মামুন ও আবু তাহেরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে মামলাটি তদন্তে নেমে জব্দকৃত ট্রাকের মালিকানা যাচাই করেন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান।

গ্রেফতারের সময় মিজানুর রহমান পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন তিনিই ট্রাকটির মালিক। কিন্তু যাছাই করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে ট্রাকের মালিকানা রয়েছে জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তির নামে। যার বাবার নাম আবদুল কাদের। কুমিল্লা সদর থানার ধানমন্ডি রোডের উত্তর রেইন কোন্স এলাকার ঠিকানা উল্লেখ করে রানার মোটরস লিমিটেডের মাধ্যমে এনসিসি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ট্রাকটি কেনা হয়। এরপর কথিত ট্রাক মালিক জাহাঙ্গীর আলমের ঠিকানা যাচাই করতে কুমিল্লা সদর থানায় চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে ওই থানা থেকে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, ঠিকানাটি ভুল। আব্দুল কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম নামের কাউকে ধানমন্ডি রোডের উত্তর রেইন কোন্স এলাকার ঠিকানায় পাওয়া যায়নি।

পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রকৃত সত্য হচ্ছে গ্রেফতার মিজানুরই ট্রাকটি কিনেছেন ইয়াবা পাচারের জন্য। ইয়াবা রাখার জন্য ট্রাকটিতে বিশেষভাবে বাক্সও তৈরি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী মাদক পাচারের সময় ট্রাক আটক হলে সহযোগী হিসেবে মালিকের নামে নিয়মিত মামলা হয়। এজন্য মিজানুর কাল্পনিক নাম-ঠিকানা দিয়ে ট্রাকটি কিনেছিল, পরে নিবন্ধন করে। যাতে পরবর্তীতে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেতে তার সুবিধা হয়।’

এদিকে গত ৭ জুলাই ৬৩ হাজার ইয়াবা উদ্ধারের মামলাটির অভিযোগপত্র দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান। এতে গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনকেই আসামি হিসেবে রাখা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় দেলোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম নামের দুইজনকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসামি মিজানুর রহমান ও আবদুল্লাহ আল মামুন পরস্পর আপন ভাই। তাদের বিভিন্ন বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে।

মিজানুর রহমান কুমিল্লার বুড়িচং থানার ময়নামতি ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার। বৈধ ব্যবসা ও জনপ্রতিনিধির আড়ালে দুই ভাই ইয়াবা কারবার করে আসছিল। কক্সবাজার থেকে কুমিল্লায় ইয়াবা পাচারের জন্য চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যোগাযোগ মাধ্যম সহজ হলেও তারা এই পথটি ব্যবহার করত না। বান্দরবান থেকে লিচু বাগান-কুয়াইশ হয়ে হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মিরসরাই অপ্রচলিত সড়ক ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করে তারা।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক প্রতিরোধে পুলিশের তৎপরতা বাড়ার কারণে কৌশল পরিবর্তন করেছে মাদক কারবারিরা। এরই অংশ হিসেবে কেবল মাদক পরিবহনের জন্যই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ট্রাক কেনার পর সেখানে বিশেষ বাক্স তৈরি করা হয়েছে। এখন ট্রাকের মালিক হয়েই ইয়াবা পাচার করছেন মাদক কারবারিরা।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মাদক পাচার,ভুয়া রেজিস্ট্রেশন,চট্টগ্রাম
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close