ইমরান হোসেন সুজন, নবাবগঞ্জ
মদের রাজ্য রূপারচর
ঢাকার নবাবগঞ্জের শোল্লা ইউনিয়নের অবহেলিত একটি গ্রাম রূপারচর। কালিগঙ্গা নদীটি শোল্লা ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে গ্রামটিকে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত স্থানীয়রা। বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর রূপারচরে বাংলা মদের ছড়াছড়ি। উপজেলা থেকে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় পুলিশ সেখানে সহজে অভিযান চালাতে পারে না। সেই সুযোগে গড়ে উঠেছে নিরাপদ মদের কারখানা। মদের ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে স্থানীয় নিরীহ মানুষ। সরেজমিনে অনুসন্ধানে চালিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য।
প্রতিদিনের সংবাদের এই প্রতিবেদক সম্প্রতি শোল্লার খতিয়া ঘাট পাড় হয়ে রূপারচরে গিয়ে দেখেন এলাকার রাস্তাঘাটগুলো এখনো কাঁচা। কোনোমতে হাঁটাচলা করা গেলেও বৃষ্টির পরে মোটর সাইকেল নিয়ে চলাচল করা যায় না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার অভাবে পিছিয়ে পড়েছে এখানকার মানুষ। তারা দরিদ্র। জীবিকার তাগিদে তারা বেছে নিয়েছে বাংলা মদের ব্যবসা।
এলাকার বেশির ভাগ মানুষই মদ তৈরির সঙ্গে জড়িত। এই মাদক ব্যবসায়ীদের আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রূপারচর নবাবগঞ্জের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই সব সময় অভিযান চালাতে পারেন না পুলিশ-প্রশাসন। মদ্যপানকারীদের কাছে রূপারচরের মদের বেশ সুনাম রয়েছে। এই চরে তৈরি হাজার হাজার লিটার বাংলা মদ নবাবগঞ্জ ছাড়াও দোহার, মানিকগঞ্জ, সাভার, মুন্সীগঞ্জ ও পুরান ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। আগে ৩০০ টাকায় এক লিটার মদ পাওয়া গেলেও এখন দাম ৬০০-৭০০ টাকা।
জানা গেছে, রূপারচরের কাশেদ, কাশেদের স্ত্রী জুসনি বেগম , ছেলে জহুরুল, তার ভাই আকমত, নুরু, নুরুর ছেলে টুটুল, মহিল, মহর, লাল চান, মো. সুমন এবং তোফাজ্জল নামের মদ ব্যবসায়ীরা চালাচ্ছেন মদ তৈরির কারখানা। এ ছাড়া পার্শ¦বর্তী নীলাম্বর পট্টির শহিদ খাঁ, জলিল খাঁ, আসলাম বেপারী, জহুরুল, মেরেজ খাঁ, মনোয়ার, মাহবুব খান মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান এলাকাবাসী। মদ তৈরির সময় যাতে ধোঁয়া না উড়ে তাই গ্যাসে তৈরি করা হয় মদ। কয়েক মাস আগে মদ নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী হাসুকে কুপিয়ে হত্যা করে তার ভাতিজি জামাই জসিম। এ ছাড়া কিছুদিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রূপারচর ও পার্শ¦বর্তী নীলাম্বর পট্টিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বাংলা মদ উদ্ধার করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানায়, রূপারচর আসলে বাংলা মদ ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়। থানা থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় এবং কালিগঙ্গা নদী থাকায় সহজে এখানে অভিযান চালাতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশাসনের লোকজন কালিগঙ্গা নদীর খতিয়া ঘাটে আসামাত্র মাদক ব্যবসায়ীরা খবর পেয়ে যান। খতিয়া ঘাটে সোর্স রাখা হয় যাতে অপরিচিত কাউকে দেখলেই সাবধান করা হয় ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় কিছু সচেতন মানুষ মাদকবিরোধী আন্দোলন শুরু করলেও অশুভ শক্তির কারণে বন্ধ হচ্ছে না মাদক ব্যবসা।
মাদক আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইউপি সদস্য কে এম খালেদ রেজা বলেন, আমি এলাকাটাকে মাদকমুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল করা যাচ্ছে না। নিজের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন আমি। রাস্তায় একা হাঁটতে পারি না। তবু আমি চাই, রূপারচরটা মাদকমুক্ত করা হোক।
শোল্লা ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান তুহিনুর রহমান বলেন, রূপারচরের বেশির ভাগ পরিবার মদ তৈরির সঙ্গে জড়িত। আমি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে একাধিকবার সেখানে অভিযান চালিয়েছি। গ্রামটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় সব সময় প্রশাসনের লোক যেতে পারে না। এই সুযোগটাই নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
নবাবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রূপারচরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। যেহেতু কালিগঙ্গা নদী পার হয়ে যেতে হয় তাই খতিয়া ঘাটে গেলেই মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের অভিযানের সংবাদ পেয়ে যায়।
পিডিএসও/তাজ