রিহাব মাহমুদ

  ২৯ মে, ২০১৮

কোটিপতি ভাইদের পারিবারিক ব্যবসা ইয়াবা

আব্দুল মজিদ ও মোহাম্মদ আলম বাবুল

মাদকবিরোধী চলমান অভিযানে একে একে বেরিয়ে আসছে এতদিন অন্তরালে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নাম-পরিচয়। দম্ভ আর দাপট দেখিয়ে মরণনেশা ইয়াবার ব্যবসা করে অল্পদিনে ভিক্ষুক থেকে রাজাধিরাজ হওয়া অনেকেই এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। কক্সবাজারে তেমনই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের খোঁজে প্রতিদিনের সংবাদের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এক ইয়াবা পরিবারের তথ্য-উপাথ্য।

কক্সবাজারের টেকনাফের একই পরিবারের ৪ ভাই মো. আলম বাবুল, জাফর আলম জানু, হাফেজ জাহাঙ্গীর ও বদিউল আলম সিকদার।নিজেদের আলিশান বাড়িতে ইয়াবার গোডাউন গড়ে তুলেছিল তারা। সেখান থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকাতে পাঠানো হতো মরণনেশা ইয়াবা। জানা গেছে, খুচরা নয়, তারা পাইকারি বিক্রি করত ইয়াবা। ৪ ভাইসহ নিকটাত্মীয় পরিবারের সব সদস্যই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই পরিবারের মধ্যে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে পরিচিতি পায় বাবুল।

মাত্র দেড় বছরে এই অবৈধ ব্যবসা করে তারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তারা ইয়াবা ব্যবসা করেন। এদের সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিক। এই সম্পদ অর্জনের উৎস নিয়ে জনমনে প্রশ্ন।

স্থানীয়দের দাবি, মাদকবিরোধী এই অভিযানেও তাদের ইয়াবা ব্যবসা থেমে নেই। মৌলানা আয়ুব আলীদের মতো আরো অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরের বাইরে রয়েছেন।

জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়ার মোহাম্মদ আলম বাবুল হোয়াইক্যং নয়াবাজার স্টেশনে রড সিমেন্টের দোকান দিয়েছেন। সেই দোকানে আছে ২০ লাখ টাকার মালামাল। গ্রীলের দোকানসহ ৪টি দোকানের মুল্য ৫০ লাখ টাকা।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়া পূর্বপাড়ার মুখে লবণের গুদাম ও মার্কেটও রয়েছে তার। মার্কেটে দোকান রয়েছে ১০টি। এই দোকানগুলোর দাম ৫০ লাখ টাকা। নামে বেনামে জমি ক্রয় করেছেন প্রায় ৩ একর। পূর্ব ও পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়ায় এই জমিগুলোর অবস্থান। সব মিলিয়ে যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। যার মালিক ইয়াবা গডফাদার বাবুল। এ ছাড়া ইয়াবা বহনের জন্য রয়েছে কয়েকটি গাড়িও।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কীভাবে তারা ইয়াবা ব্যবসায় নেমেছে, কোথা থেকে ইয়াবা আসে, কোথায় এবং কাদের কাছে বিক্রি করে? এমনকি ইয়াবা ব্যবসা করেই এদের সম্পদ অর্জন, এই সম্পদ অর্জনের উৎস- সবকিছু নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানান প্রশ্ন।

গত দেড় বছর আগেও যার পেশা ছিলো চাষাবাদ। দেড় বছরের ব্যবধানে মো. আলম বাবুল হয়ে গেলেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। আলাদিনের চেরাগ পাওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তার সাথে মাছ ব্যবসায়ী আবদুল মজিদও এখন কয়েক কোটি টাকার মালিক। তাদের অস্বাভাবিক সম্পদ দেখে স্থানীয় মানুষও হতবাক।

মোহাম্মদ আলম বাবুলের নগদ টাকা আছে অন্তত কোটি টাকার উপরে বলে সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৫ জুন বাবুলের ইয়াবা চালান আটকের সময় পুলিশের হাতে অবৈধ অস্ত্রসহ ধরা পড়েছিলো তার বড় ভাই জাফর আলম প্রকাশ জানু। এঘটনায় থানায় মামলাও হয়। তার অপর ভাই বদিউল আলম সিকদার এখন ঢাকায় থাকেন বলে অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র আরো জানায়, কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান মুলত যেতো বদিউল আলম সিকদারের কাছে। অপর ভাই জাহাঙ্গীর আলম বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন।

বাবুলের ভাই বদিউল আলম সিকদার কক্সবাজার জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ২০১৫ সালের ৪ মার্চ বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ আটক হন। এসময় তার সহযোগী রামু গর্জনিয়ার জাহাজপাড়া এলাকার মৃত বশর করিমের ছেলে আবদুল হাকিমকেও আটক করে পুলিশ। মোঃ আলম বাবুলের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।

এই ইয়াবা গডফাদার বাবুল সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য আবদুল মজিদ। পেশায় ছিলো মাছ ব্যবসায়ী। মাছ ব্যবসার আড়ালে দেদারছে চালিয়ে আসছিল ইয়াবা ব্যবসা। ২০১৬ সালে ইয়াবা ব্যবসার টাকায় আবদুল মজিদ পূর্বসাতঘরিয়াপাড়ার মুখে অন্তত ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করে বিলাস বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

এছাড়াও পূর্ব সাতঘরিয়াপাড়ায় নামে বেনামে ৬০/৭০ লাখ টাকার জমি ক্রয় করেন। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। গত তিন বছর আগের মাছ ব্যবসায়ী প্রায় ৫০ একর লবণের মাঠ অগ্রীম টাকায় বর্গা নেন। এই বর্গা জমিগুলো পুণরায় তৃতীয় পক্ষকে বর্গা দিয়ে মধ্যস্বত্তভুগির ভুমিকায়ও রয়েছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন সময় তাদের লোকজন ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ধরা পড়ে। তবে, তাদের ইয়াবা বহনকারী ধরা পড়লেই তাদের প্রতিপক্ষ লোকদের নাম স্বীকার করে বেকায়দায় ফেলে দেন। এলাকায় এধরনের নজির অহরহ রয়েছে।

এই মো. আলম বাবুল ও আবদুল মজিদ জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বিপুল পরিমাণ সম্পদ গত কয়েক বছরে অর্জন করেছেন। এরা যতো সম্পদ অর্জন করেছেন তা তাদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। দেড় বছরে ‘অস্বাভাবিক’ সম্পদ অর্জন করেছেন এই ইয়াবা ব্যবসায়ী বাবুল ও আবদুল মজিদ। এসব সম্পদকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত মনে করছে সচেতন মহল।

এব্যপারে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কিছুতেই ছাড় দেয়া হবে না।

পিডিএসও/রি

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোটিপতি ভাই,পারিবারিক ব্যবসা,ইয়াবা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist