হাসান ইমন

  ১৯ এপ্রিল, ২০১৮

ওয়াসা : বিলের রিমোট মিটার রিডারের হাতে

*অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে *বাণিজ্যিক ভবনের বিল আবাসিক হিসেবে

ঢাকা ওয়াসার পানির বিল প্রস্তুতকারীদের (মিটার রিডার) দুর্নীতি আর অনিয়মের কারণে ভৌতিক বিলের শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। এজন্য মাস শেষে তাদের টানতে হচ্ছে বাড়তি বিলের বোঝা। সরবরাহকৃত বিলের সঙ্গে মিটারের কোনো সামঞ্জস্য পাওয়া যায় না। এর কোনো প্রতিকার না মিললেও, ওয়াসার এক শ্রেণির কর্মকর্তার আঙুল ঠিকই ফুলে ফেপে কলাগাছে পরিণত হচ্ছে। মাসে মাসে হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হওয়া যেন গ্রাহকদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ওয়াসা-সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, গ্রাহকদের পানির বিল কত হয়েছে সেটি চেক করতে মাঠপর্যায়ে সুপারভাইজার কাজ করেন। প্রতিমাসে বাড়ির মিটার চেক করার কথা তাদের। কিন্তু একটি বাড়ির পানির বিল একমাস চেক করে পরবর্তী মাসে সেই আন্দাজ অনুযায়ী, বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও মাঠপর্যায়ের কিছু সুপারভাইজার বাণিজ্যিক ভবনকে আবাসিক ভবন দেখাচ্ছে। আবার আবাসিক ভবনকে বাণিজ্যিক হিসেবে বিল করে দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক হয়রানি থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না।

ওয়াসার বিজ্ঞপ্তির তথ্য মতে, ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনে রাজস্ব বিভাগের কয়েক শ মিটার রিডার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে অর্থ আদায় করেন। গৃহস্থালীতে এক হাজার লিটার পানির দাম ১০ টাকা ৫০ পয়সা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। সুতরাং, বাণিজ্যিক ভবনকে আবাসিক দেখাতে পারলেই এক হাজার লিটার পানিতে ২৩ টাকা ১০ পয়সা ফাঁকি দেওয়া সম্ভব। যা দুর্নীতিবাজের পকেট ভারী করে।

মাঠ পর্যায় থেকে জানা গেছে, অনেক সময় গ্রাহকরাও নিয়মিত বিল হাতে পান না। মাসের পর মাস বিল জমতে থাকে। এরপর হঠাৎ এক দিন বিপুল অঙ্কের বিল আসে তাদের কাছে। এই বিল একসঙ্গে পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকে না অনেকেরই। মিটার রিডাররা এ সুযোগটি কাজে লাগান। একসঙ্গে বিল পরিশোধে অপারগ গ্রাহকরা মিটার রিডারের সহযোগিতা চাইলে তারা নির্ধারিত অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন, বিনিময়ে বিলে টাকার পরিমাণ কমিয়ে দেন।

এছাড়া বাণিজ্যিক ভবন ও শিল্প-কারখানার মাসে লাখ লাখ টাকার পানির বিল হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো কোনো কারখানায় নামকাওয়াস্তে বিল আসে। জানা গেছে, ওইসব কারখানা কিংবা বাণিজ্যিক ভবনের মালিক মিটার রিডারদের সঙ্গে চুক্তি করে চলেন। কোনো কোনো কারখানায় অবৈধ লাইন আছে এবং কোথাও কোথাও মিটারই নেই। মাস শেষে তাদের আনুমানিক বিল দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার একজন কর্মকর্তা বলেন, ওয়াসার কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন। তারা খুবই প্রভাবশালী এবং এতটাই বেপরোয়া যে, নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা করেন না। মাঠ সুপারভাইজারদের দুর্নীতি ধরা পড়লে আঞ্চলিক অফিসারদের ম্যানেজ করেন তারা। এতে গ্রাহকরা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। ঊধ্বর্তনদের ম্যানেজ করে অভিযোগগুলো সরিয়ে ফেলে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বনানী এলাকার ৫ নং রোডের ব্লক এফ এর ১৫ নম্বর বহুতল বাড়িটি ২০১৭ সালের মার্চ থেকে ভাঙা শুরু হয়। বাড়িটি সম্পূর্ণ ভাঙার পর ৪-৫ মাস খালি প্লট পড়ে থাকে। প্লটে পানির লাইন বিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এমনকি প্লটে কেউ বসবাস করেন না। সেখানে পানির কোনো ব্যবহার নেই। এরপরও ওয়াসা থেকে অস্বাভাবিক হারে পানির বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়ির মালিক মাহমুদা বানুকে।

এছাড়াও পিপিআই রাজস্ব জোন-৫ কর্তৃক চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আবুল ফজল নামের এক গ্রাহকের বাড়িতে একটি নতুন মিটার স্থাপন করা হয়। সেখানে পুরাতন মিটারের বিলের দৈনিক গড় নতুন মিটার এর দৈনিক গড় খরচ অপেক্ষা অনেক বেশি। শুধু মাহমুদা বানু ও আবুল ফজলই নন এরকম হাজারও বাড়ির মালিক প্রতিমাসে ওয়াসার পানির বিলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

ওয়াসার বিলের বিষয়ে আবদুল আজিজ নামের এক গ্রাহক বলেন, ৪টি টিনসেট ঘরে প্রথম মাসে দুই হাজার টাকা পানির বিল আসলে তা পরিশোধ করি। দ্বিতীয় মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা বিল এসেছে, সেটাও পরিশোধ করেছি। কিন্তু তৃতীয় মাসে ১০ হাজার ২৬৫ টাকা বিল এসেছে। এতেই হঠাৎ চমকে উঠি। সমস্যা সমাধানে ওয়াসার সায়দাবাদ জোনে আসি। তখন জোনের এক কর্মকর্তা বললেন- আবাসিক ভবন বাণিজ্যিক ভবন দেখিয়ে পানির বিল ধরা হয়েছে। এ জন্য পানির বিল বেশি আসছে। বিল করার সময় সুইপারভাইজার মিটার না দেখেই বিলের কপি ধরিয়ে দিয়েছে।

আবদুুল আজিজ আক্ষেপ করে আরো বলেন, ওয়াসা দুর্নীতির আখড়া। এখানে সাধারণ গ্রাহকরা প্রতিনিয়ত নানাভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তারা অনিয়ম ও দুর্নীতির কাছে জিম্মি। জোন অফিসগুলো সেবাদানে আগ্রহী নয়, দুর্ভোগ নিরসনে অভিযোগের কোনো প্রতিকার হয় না। মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসা প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আজিমুজ্জামান বলেন, প্রতিমাসে চার লাখ পানির মিটারের তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। ৩০০ টাকার রিডিং দেখতে ১০০ টাকা ভাড়া লাগে। এক্ষেত্রে ওয়াসার প্রতিটি জোন নিজেদের এলাকা পরিদর্শন করে গ্রাহকদের বিলের কপি দিয়ে থাকে। সেখানে বিল সমস্যা হলে জোন দেখবে। জোন অফিস থেকে বিলের কপি ওয়াসা ভবনে আসবে।

তিনি আরো বলেন, মাঠ পর্যায়ে জনবল কম হওয়ায় পানির বিলে কিছুটা সমস্যা হয়ে থাকে। এ সমস্ত কাজে কিছু সমস্যা তো থাকেই। সমস্যা সমাধানেই আমরা আছি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দুর্নীতি,মিটার রিডার,ওয়াসা,অনিয়ম
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist