reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ এপ্রিল, ২০১৮

বাবুল নয়, বিউটির চাচা ময়না মিয়াই হত্যায় জড়িত

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে আলোচিত কিশোরী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর দিয়েছেন বিউটির চাচা আওয়ামী লীগ নেতা ময়না মিয়া। বিউটি হত্যায় নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দিতে তিনি লোমহর্ষক অনেক তথ্য দিয়েছেন।

শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে ময়না মিয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ১৬ মার্চ রাতে ময়না মিয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিউটিকে হত্যা করে কাঁধে করে লাশ পুরাইকলা হাওড়ে ফেলে রাখেন। তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সূত্র আরও জানায়, গত ইউপি নির্বাচনে বাবুলের মা কলম চান বিবির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। এতে কলম চান বিবি জয়ী হন। নির্বাচনের আগে কলম চান বিবিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে বারণ করেন ময়না মিয়া। কিন্তু কলম চান তা না শুনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। মূলত এ আক্রোশ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন ময়না মিয়া।

অন্যদিকে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সাক্ষী হিসেবে বিউটির নানি ফাতেমা বেগমের জবানবন্দী রেকর্ড করে আদালত। তিনি আদালতকে জানান, গত ১৬ মার্চ রাতে বিউটির পিতা সায়েদ আলী তাদের বাড়ি থেকে বিউটিকে নিয়ে আসেন। এ সময় বাবুল সেখানে ছিল না বলে তিনি জানান। বিউটির নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগ ময়না মিয়া বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসা করবেন এবং বাবুলের সঙ্গে বিয়ে দেবেন মর্মে সায়েদ আলীকে দিয়ে বিউটিকে গুণীপুর থেকে নিয়ে আসেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ ছাড়া মূল অভিযুক্ত বাবুল মিয়াও রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে বিউটির পিতা সায়েদ আলী ও মা হোসনে আরাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে প্রশাসনের কেউই এ বিষয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। পুলিশের কোনো কর্মকর্তাও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।

হবিগঞ্জ আদালত পরিদর্শক ওহিদুর রহমান জবানবন্দীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এর বেশি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে শনিবার ব্রিফিং করে সব জানাবেন। গত সোমবার বাবুল মিয়াকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

প্রসঙ্গত, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর কন্যা বিউটি আক্তারকে (১৬) গত ২১ জানুয়ারি ধর্ষণ করে একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির পুত্র বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। ওই মামলায় সাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণীপুর গ্রামে তার নানা বাড়িতে।

গত ১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন ১৭ মার্চ গুণীপুর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পুরাইকলা হাওড়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির পিতা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ মার্চ সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় বাবুল মিয়াকেও।

বিউটি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে।

প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তাও।

দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মাঝেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানিসহ স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের।

অবশেষে গত বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে হত্যার মোটিভ। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। প্রকাশ করেন জড়িত অন্যদের নামও।

বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি, বাবুল ও ময়না মিয়াকে শুক্রবার রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাবুল,বিউটি,ময়না মিয়া,হত্যায় জড়িত
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist