পোনা ব্যবসায়ী হোসেন আলীই ইয়াবা ডন আলম
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চাঞ্চল্যকর কাহিনী ক্রমান্বয়ে বিস্মিত করছে মানুষকে। এবার আরও এক ইয়াবা গডফাদারের গ্রেপ্তারের খবরে হতবাক দেশবাসী। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া হোসেন আলী এখন ইয়াবা সম্রাট আলম । এক কোটি টাকা নগদে জামানত দিয়ে কক্সবাজারে কলাতলির শামীম গেস্ট হাউজ ভাড়া নিয়ে সেখানে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল ইয়াবা গোডাউন। হোসেন আলী কত কোটি টাকার মালিক তা তিনি নিজেও জানেন না।
জানা গেছে, মাত্র তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন তিনি। ছিলেন মাদকাসক্ত। চিংড়ি মাছের পোনা, কটেজ ব্যবসা, একটি পত্রিকার সাবেক পরিচালক, জমি-জমা বিক্রিতেও আসেনি কাঙ্খিত পরিমাণ টাকা। এরপর দ্রুত কোটিপতি হবার স্বপ্নে পা বাড়ান ইয়াবা ব্যবসায়। গত ৪ বছরে তিনি গড়ে তোলেন ইয়াবার বড় একটি সিন্ডিকেট। এক লাখ পিস কমে কখনও ইয়াবার চালান কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আনতেন না তিনি। নিজ রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার সুবিধা নিয়ে নিজস্ব গাড়িতে শুধু ঢাকা নয় পার্শ্ববর্তী জেলাতেও ইয়াবার চালান করতেন।’
তেমনই এক ইয়াবা সম্রাটের নাম জানালো র্যাব। যার নাম মোঃ আলম। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তার নাম আলম নয়, আলম নামে পুরো কক্সবাজার জেলায় তাকে কেউ চিনে না। ভুঁয়া নাম দিয়েছে র্যাবের কাছে।
রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন ১৯ নং সড়কের পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজারের ১৫৩ নং বাসা হতে এই হোসেন আলীসহ চারজনকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বুধবার বিকেলে এক লাখ তেইশ হাজার পিস ইয়াবা, ইয়াবা বিক্রির ৮১ হাজার টাকা, সাতটি মোবাইল ফোন জব্দ করে। মিডিয়ায় চলে আসে এই খবর। তবে নাম মো: আলম দিলেও ছবি দেখে ইয়াবা সম্রাট হোসেন আলীকে চিনতে পেরেছে কক্সবাজার জেলার মানুষ। র্যাবের নিকট পরিচয় গোপন করে মোঃ আলম নাম দেয়া ব্যক্তি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী এলাকার হাজী সামশুল আলমের ছেলে হোসেন আলী।
তার সাথে গ্রেফতার করা হয় হোসেন আলীর ছোট ভাই মো. জসিম উদ্দিন (৩০), মো. সালাউদ্দিন (২৭) ও মো. মিজানুর রহমান (৩৩)কে। মিয়ানমারের এক মাদক ব্যবসায়ীর হাত ধরে ইয়াবা ব্যবসায় নামেন হোসেন আলী প্রকাশ কথিত মোঃ আলম।
জানা গেছে, গত ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর এক কোটি টাকা নগদ জামানত দিয়ে কলাতলি বি ব্লকের ৮নং প্লটের উপর গড়ে তোলা শামীম গেস্ট হাউজের চারতলা বিশিষ্ট ৪১টি কক্ষ ভাড়া নেন হোসেন আলী। ‘শামীম গেস্ট হাউজ’কে ইয়াবা মজুদের জন্য ব্যবহার করেন তিনি। সেখান থেকে মূলত নিজস্ব রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে, কখনও পিকআপ, ট্রাক বা বাসের বডিতে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইয়াবার চালান করতেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি র্যাবকে জানিয়েছেন, এক লাখ পিসের নিচে কখনও তিনি ইয়াবার চালান ঢাকায় আনেননি। যতবার তিনি ইয়াবা সফলভাবে ঢাকায় পাঠিয়েছেন ততবারই পরিবর্তন হয়েছে মোবাইল ফোন নম্বর।
সুত্র জানিয়েছে, এই ইয়াবা ব্যবসায় একই সিন্ডিকেটে শামীম গেস্ট হাউজ মালিক পক্ষ, জিএম রফিক, নুরুল ইসলাম ও হোসেন আলীর ভাই মোঃ আলী সহ আরো বেশ কয়েকজন জড়িত বলে একাধিক নির্ভর যোগ্য সুত্র জানায়।
নগদ এক কোটি টাকা জামানত দিয়ে ইয়াবা ডন হোসেন আলী মাসিক আড়াই লাখ টাকা ভাড়ায় শামীম গেস্ট হাউজটিতে আসলে কিসের ব্যবসা চলতো, কেন এই হোটেলটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল, তা এখন বেরিয়ে এসেছে অনেকটা।
তবে একটি সুত্র জানিয়েছে, শামীমে গেস্ট হাউজ সিন্ডিকেটের এই ইয়াবা ব্যবসা নতুন নয়, এর আগে আরো একটি ইয়াবা সিন্ডিকেটকে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। এরা দীর্ঘ দিন ধরেই ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি নগদ টাকার টাকার মালিক হয়েছে। গত ১৭/১২/২০১৭ইং শামীমে গেস্ট হাউস ভাড়া নেয়ার সময় শামীম গেস্ট হাউজ মালিক মোঃ সেলিমকে জামানত বাবদ নগদ এক কোটি টাকা দেয়া হয়। এই এক কোটি টাকা নগদে দেয়ার কথা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ভাড়া চুক্তি নামা পত্রে উল্লেখ আছে।
এখন জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাংক কিংবা চেকের মাধ্যমে জামানতের এক কোটি টাকা না নিয়ে নগদে নেয়ার সময় শামীম গেস্ট হাউজ মালিক কি জানতেন না, এত বিশাল অংকের নগদ টাকার উৎস কি? এরা কিসের ব্যবসা করেন। আসলে সব জানার পরেও এমন ঘটনা, বলে দাবি অনেকের।
এদিকে, ওই গেস্ট হাউজটি ইয়াবা ডন হোসেন আলীকে আগামী ১৮/১২/২০১৮ সাল মেয়াদে ১ কোটি টাকা জামানতে ভাড়া দেয়া হলেও নিচ তলার দায়িত্বে ছিলেন শামীম গেস্ট হাউজ মালিক মোঃ সেলিম। তবে অভ্যর্থনা কক্ষ হোসেন আলী ব্যবহার করতেন। এতেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, ইয়াবা ডনের সাথে মালিকপক্ষ জড়িত বলে সন্দেহ পোষণ করেছেন অনেকে।
শামীম গেস্ট হাউজে কাদের নিয়মিত যাতায়ত ছিলো, ওই গেস্ট হাউজের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা পরিবহণ কাউন্টারগুলোর ভুমিকাসহ আরো অনেক চাঞ্চল্যকর বিষয়গুলো তদন্ত করে ইয়াবা সিন্ডিকেটে আর কারা জড়িত তা বের করা হোক। পাশাপাশি হোটেল, মোটেল আর গেস্ট হাউজ কেন্দ্রিক ভাড়াটিয়া আর মালিক পক্ষ ইয়াবা ব্যবসার চাঞ্চল্যকর তথ্যগুলো উদঘাটন হোক, এমনটাই দাবি সবার।
পিডিএসও/রিহাব