ছেলের অপরাধে মাকে শ্লীলতাহানি, ঘরছাড়া পরিবার
প্রেম করছে ছেলে আর ভুগছে পরিবার, এমন দৃশ্য হরহামেশা দেখা যায় সিনেমায়। তেমনি ছেলের প্রেমের অপরাধে মাকে শ্লীলতাহানি করে বাড়ি থেকে তারিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে। শরীয়তপুরের সখিপুরেরর মনাই হাওলাদার কান্দি গ্রামে এমন বর্বর ঘটনা ঘটেছে। অসহায় পরিবারটি আট দিন ধরে ভিটে বাড়ি ফেলে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ সুযোগে পরিবারটির খাদ্যশস্য ফসলাদি ও মূল্যবান গৃহস্থালী সামগ্রী লুটে নিয়েছে তারা। রক্ষা পায়নি গোয়ালের গরু এবং হাস মুরগীও।
এদিকে পুলিশ বলছে থানায় কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করেনি তবে সংবাদ কর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
জানা যায়, শরীয়তপুরের সখিপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মনাই হাওলাদার কান্দি গ্রাম। এ গ্রামের রফি হাওলাদারের মেয়ে সুমাইয়া ও ছাত্তার মাঝির ছেলে ইয়াসিনের সাথে র্দীঘদিন যাবত প্রেমের সর্ম্পক চলছিল। সোমবার প্রেমের টানে ঘর ছাড়ে দু'জন। জানাজানি হলে ছেলে ও মেয়ের পরিবার তাদের উদ্ধারে খোঁজাখোঁজি শুরু করে।
প্রেম সংক্রান্ত ঘটনায় অপহরণের মামলা দায়ের করেন সুমাইয়ার পরিবার। এরপর সুমাইয়ার ভাই সেলিম হাওলাদার ইয়াসিনের মা তাসলিমার ওপর নির্যাতন চালায় ও বাড়িতে লুটতরাজ করে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন ইয়াসিনের বাবা ছাত্তার মাঝি ও মা তাসলিমা বেগম।
তাসলিমা বলেন, সেলিম আমাকে কিল ঘুষি মারতে মারতে কাপোড় খুলে ফেলে। আমি পাশের বাড়ি দৌড়ে পালাই। তারা আমাকে লুকিয়ে রাখে। সেখানেও সে মারার জন্য খোঁজা-খোঁজি করে। এরপর ওই বাসার একটি পুরানো কাপড় নিয়ে তা পরিধান করে পালিয়ে যাই। পরে শুনি আমাদের গোয়ালের গরু, হাস মুরগীসহ ঘরের সব কিছু লুট করে নিয়ে গেছে ওরা। ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। প্রাণের ভয়ে ৮ দিন ধরে নিজের ভিটা বাড়ি ছেলে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমরা অসহায়, সরকারের সহযোগীতা চাই।
মনাই হাওলাদার কান্দি গ্রামের হালিমা বেগম, খাদিজা বেগম ও তানিয়া বেগমসহ স্থানীয় প্রতিবেশিরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে সুমাইয়ার ভাই সেলিম হাওলাদার স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে ইয়াসিনের বাড়িতে ঢুকে খাদ্য শস্য, গোয়ালের গরুসহ গুরুত্বপূর্ণ গৃহস্থালী সামগ্রী নিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়। তাদের ভয়ে পরিবারটি বাড়িতে আসতে পারছে না। সুমাইয়ার পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় গ্রামের বাকীরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।
স্থানীয় চরভাগা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইয়াকুব হাওলাদার ও কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইলিয়াস মোল্লা বলেন, শুনেছি প্রেমের সর্ম্পক করে ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেছে। ছেলের পরিবারটা গ্রামে নেই তাদের ঘরে তালা ঝুলছে তবে কি কারণে তারা গ্রাম ছেড়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না। আমাদেরকে কিছুই জানায়নি। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি তারা।
বাড়িতে গিয়ে সুমাইয়ার ভাই অভিযুক্ত সেলিম হাওলাদারকে পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে সেলিম ইয়াসিনদের বাড়িতে লুটতরাজ ও তার মাকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, সুমাইয়াকে অপহরণের অভিযোগ তার মা বাদী হয়ে একটি অপহরণের মামলা দায়ের করেছেন। সুমাইয়াকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। তবে ইয়াসিনের বাড়িতে লুটতরাজ ও তার মাকে নির্যাতনের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। ঘটনাটি জানার পর আমরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পিডিএসও/রিহাব