দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি
নুরুল্লাহপুর মেলায় অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন, ঝুঁকছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা
ঢাকার দোহার উপজেলায় শুরু হয়েছে চার‘শ বছরের ঐতিহ্যবাহী নুরুল্লাহপুর ফকিরবাড়ির ওরস। আর এ ওরসকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা। ‘ভ্যারাইটি শো’র নামে মেলায় প্রর্দশন করা হচ্ছে অশ্লীল নৃত্যের । পৃথক দুটি মঞ্চে গত দুই রাতভর চলেছে অশ্লীল নৃত্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই নুরুল্লাহপুর মেলায় ‘ভ্যারাইটি শো’র আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে এ ভ্যারাইটি শো। স্থানীয় বেশির ভাগ কিশোর ও যুবক ছেলেরা এই শো‘র সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
তারা আরও বলেন, প্রতিবছর কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য দেখতে মেলা প্রাঙ্গণে ঢল নামে কিছু উচ্ছৃঙ্খৃল দর্শকদের। ঘটে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা। গত বছর মেলায় এ আয়োজনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয় পরে তা মামলা-হামলা পর্যন্ত গড়ায়। এরপরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা স্থায়ীভাবে এ ধরনের কর্মকান্ড বন্ধের দাবি জানাই। সব জেনেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মাঝে। সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি হওয়ায় ফেসবুকসহ নানা সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পোস্টের মাধ্যমে প্রকাশ্যে অশ্লীল আয়োজনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে স্থানীয় সচেতন মহল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন অভিযোগ করেন, দোহার উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন ও তার বাবা সিরজন মোল্লা এবং কুসুমহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মামুন খাঁ ভ্যারাইটি শো দুটি পরিচালনা করছেন। অন্তরালে আরও রয়েছে রাজনৈতিক নামধারী বেশ কিছু কর্তাব্যক্তি। এদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে মাদক ব্যবসা। প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গাঁজা। মাত্র ১০ টাকা থেকে শুরু করে ক্রেতার চাহিদানুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে যেকোনা মূল্যের গাঁজা। পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেটও। এমতাবস্থায় মেলা প্রাঙ্গনে আনাগোনা বেড়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি রাতের বেলা চলছে জুয়ার আসর। যাতে বড় অংকের টাকা খোয়াচ্ছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। আর এমন সময় এই নাচ-গানের আর ‘ভ্যারাইটি শো’র কারণে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় চরম ব্যাঘাত ঘটবে। তারা আরো আশংকা করে বলেন, সামাজিক অবক্ষয় উঠে যেতে পারে চরম পর্যায়ে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে ভ্যারাইটি শোর আয়োজক উপজেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আকতার হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমি সার্কাসের সঙ্গে জড়িত। ভ্যারাইটি শো কারা করছে, তা আমার জানা নেই।’
আরেক আায়োজক কুসুমহাটি ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক মামুন খাঁ বলেন, ভ্যারাইটি শো’র সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বা কারা এটা করছে আমার জানা নেই, থানা-পুলিশ ভালো বলতে পারবে।’
এ ব্যাপারে দোহার থানা ওসি (তদন্ত) ইয়াসীন মুন্সি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে আমি মেলায় গিয়ে শো বন্ধ করে দিয়ে এসেছিলাম। শুনেছি আমরা চলে আসার পর আবার শো চলেছে। আমরা চাই এসব অশ্লীল কর্মকান্ড বন্ধ হোক। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে দোহার থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম বলেন, মেলাকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ মেনে নেওয়া হবে না। আমি গত মঙ্গলবার দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করে এসেছি। কেউ যদি অশ্লীল কোনো আয়োজন করার চেষ্টা করে, তাহলে অভিযান চালিয়ে সব ভেঙে দেওয়া হবে।
দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গসংগঠন এ ধরনের অশ্লীল আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। যদি কেউ থেকে থাকে তাদের দায়ভার দল নেবে না। আমি র্যাব ও পুলিশকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। অশ্লীল কোনো আয়োজন করা হলে, তা শক্ত হাতে দমন করা হবে।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে.এম. আল-আমীন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সরেজমিনে পরির্দশন করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিডিএসও/রিহাব