চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার নয়া কৌশল
দেশে চাকরির বাজারকে বলা হয় সোনার হরিণ। এই সোনার হরিণ শিকারের আশায় প্রতিনিয়ত ছুটছে অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতী। কেউ চাকরি পাচ্ছে আর কেউ হচ্ছে সর্বশান্ত। চাকরির অাশায় থাকা বেকারদের টার্গেট করে কিছু প্রতারক নানা প্রলোভনে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। দেশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা নতুন কোনো ঘটনা নয়। এবার এই ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন 'বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র'। চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণাই এদের কাজ। তবে এবার এক গণমাধ্যমকর্মীর পরিচিতের সঙ্গে এমন প্রতারণার চেষ্টা করায় তাদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। ফোনের কথোপক্থনেই স্পষ্ট হয়ে গেছে এটি একটি নামসর্বস্ব ও ভুয়া প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, 'বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র' নামের এই প্রতিষ্ঠানটি গত ১২/০৯/২০১৭ তারিখে ৬টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ভুক্তভোগী সরল মনে সেই প্রতিষ্ঠানে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে কোনো টাকা বা ব্যাংক ড্রাফট দেওয়ার বিষয় উল্লেখ ছিল না।
সোমবার দুপুর ১টার দিকে ০১৮৪৫-৯৩৩৬৬৭ নম্বর থেকে একটি ফোন আসে আবেদনকারীর কাছে। একজন নারী সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার পরিচয়ে ১২৫০ টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিতে বলে। বিকাশ নম্বর হিসেবে দেওয়া হয় ০১৮১৪-৩৫৫৮৯১। বলা হয়, টাকা দেওয়ার পর বাড়ির ঠিকানায় নিয়োগপত্র দেওয়া হবে। টাকা পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে ওই নারী বলেন, রেজিস্ট্রেশনের জন্য এই টাকা দিতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিতে হলে প্রার্থীকে অগ্রিম টাকা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। তা-ও আবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (আজ দুপুর ২টা থেকে ৩টা) টাকা দিতে হবে। সন্দেহ হওয়ায় আবেদনকারী বিষয়টি পরিচিত গণমাধ্যমকর্মীকে অবহিত করেন। ঘটনা শুনে সেই নম্বরে ফোন দেওয়া হয়। ফোনে নাম জানতে চায়লে ফোনের অপর প্রান্তে থাকা সেই নারী নিজের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান।
উল্লেখ্য, বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যোগাযোগের জন্য কোনো মোবাইল বা টেলিফোন নম্বর সংযোজিত নেই।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চায়লে ওই নারী বলেন, 'মেডিক্যাল টেস্টের জন্য' ১২৫০ টাকা দিতে হবে! যদিও আগে বলা হয়েছিল, 'রেজিস্ট্রেশনের জন্য'।
অফিসে গিয়ে সশরীরে টাকা দিতে চাইলে তারা অস্বীকার করে বলে, বিকাশে টাকা দিতে হবে। সন্দেহ আরো বেড়ে গেলে জেরা শুরু হয়। একপর্যায়ে সেই নারী বলেন, 'ভাই, আপনার টাকা এখন দেওয়ার প্রয়োজন নাই। বাড়ির ঠিকানায় নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে পরে টাকা দেবেন।'
জানা গেছে, তাদের কথা না শুনে অফিসের ঠিকানায় যেতে চায়লে বাজে ব্যবহার করেন ওই নারী। একপর্যায়ে তিনি দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। সেই মুহূর্তে সাংবাদিক পরিচয় দিলে সেই নারী আরো রেগে গিয়ে বলেন, 'পুলিশ-সাংবাদিক সব আমাদের কেনা। কেউ আমাদের কিছু করতে পারবে না। এসবের টাইম নাই আমাদের কাছে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে বুঝবেন মজা কারে কয়।'
এই কথা বলার পর সেই নারী ফোন কেটে দেন। আর ফোন ধরেননি। কিছুক্ষণ পর সেই আবেদনকারীকে আবারো ফোন দিয়ে ওই নারী বলেন, 'আজ টাকা দিতে না পারলে আগামীকাল দিলেও চলবে।' কিন্তু প্রথমবার ফোনালাপে তিনি বলেছিলেন, আজ দুপুর ২টা থেকে ৩টার মধ্যেই টাকা দিতে হবে। সরাসরি নয়; বিকাশে দিতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসিকে অবহিত করলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগ ব্যতীত তারা কোনো প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না। অভিযান পরিচালনা করতে অন্তত একটি মৌখিক অভিযোগ হলেও তাদের প্রয়োজন। তবে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে বলেও বন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, চাকরি দেওয়ার নামে এসব প্রতারণা অনেকদিন ধরেই হয়ে আসছে। দুঃখের বিষয় হলো, বারবার এসব ঘটনা মিডিয়ায় আসার পরও মানুষ সচেতন হচ্ছে না। এই অজ্ঞতার সুযোগে প্রতারকদের রমরমা বাণিজ্য চলছে।
পিডিএসও/রিহাব