নিজস্ব প্রতিবেদক
গ্রাহকদের সঙ্গে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ
প্রতারণা : অনলাইন ইউনিক শপ-এ মোবাইল অর্ডারে সাবধান!
অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে অনলাইন ইউনিক শপ’র বিরুদ্ধে। জানা গেছে, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা রাইয়াত গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা অনলাইন ইউনিক শপে একটি অপ্পো এফ ৩ প্লাস ব্ল্যাক কালার (যার মূল্য ৩৭০০ টাকা) পছন্দ করে বিজ্ঞাপনে দেয়া নাম্বার 01781-863214 এ ফোন করে মোবাইলটি কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করে। অপরপ্রান্তে ফোন রিসিভ করা নারী উক্ত ক্রেতাকে প্রথমে ১০০ টাকা বিকাশ করার কথা বলে। যথারীতি অভিযোগকারী ক্রেতা উক্ত নাম্বারে ১০০ টাকা বিকাশ করার পর বিষয়টি অবহিত করলে ফোন রিসিভ করা নারী ক্রেতার নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে নেয়। এরপর আধঘণ্টা পার হলে ওই নাম্বার থেকে ফোন করে উক্ত নারী ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে এস এ পরিবহনে প্রোডাক্ট পাঠানো হবে তাই ঢাকায় কোন এলাকা থেকে নিতে ক্রেতার সুবিধা হবে। ভুক্তভোগী ক্রেতা রাইয়াত আশা করেছিলো ঢাকার ভিতর ডেলিভারী ম্যানের মারফত অর্ডারকৃত মোবাইল হাতে পাবে। কিন্তু এস এ পরিবহনে প্রোডাক্ট আসবে জেনে অবাক হলেও জানায় মহাখালী নাবিস্কো শাখা থেকে নিতে সুবিধা হবে। তখন বলা হয় ডেলিভারীর সময় আজ পার হয়ে গেছে। আপনার প্রোডাক্ট আগামীকাল কুরিয়ার করা হবে আপনি পরশুদিন পেয়ে যাবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এস এ পরিবহন মহাখালী শাখা থেকে ক্রেতাকে ফোন করে মোট ৩৭২০ টাকা দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে আসতে বলে। ক্রেতা রাইয়াত কন্ডিশনের টাকা পরিশোধ করে মোবাইলটি হাতে নেয়। এরপর প্যাকেট খুলে দেখে অপ্পোর পরিবর্তে স্যামসাং মোবাইল পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা অনলাইন ইউনিক শপের নাম্বারে ফোন করে পরিচয় দিয়ে প্রসঙ্গ উঠালে লাইন কেটে দেয়। এভাবে বারবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেনি। একপর্যায়ে অপরিচত নাম্বার থেকে ফোন করা হলে সেই নারী কন্ঠ জানায়, এটা ডেলিভারী ম্যানের ভুল। কিন্তু ক্রেতা বিষয়টি মানতে নারাজ।
মারিয়া টেলিকমের এই রশিদটিও ভুয়া
ভুক্তভোগী ক্রেতা রাইয়াত বলেন, আমি যে মোবাইল পছন্দ করে অর্ডার করেছি, আমি সেই মোবাইলই চাই। আমি তো স্যামসাং অর্ডার করিনি, তাহলে এটা নেবো কেন?
সেই নাম্বারে বারবার ফোন করা হলেও প্রতিবারই লাইন কেটে দেয়। এভাবে দুইঘণ্টা পার হবার পর, অন্য আরেকটি নাম্বার থেকে 01781-863214 এ নাম্বারে ফোন করে পুলিশের ভয় দেখালে সেই নারীকণ্ঠ জানায়, আপনি আগামীকাল আপনার অর্ডারের নাম্বারটি পেয়ে যাবেন।
কিন্তু পরদিন শুক্রবার সারাদিন পার হলেও এ বিষয়ে কোন সমাধান হয়নি বলে জানান ভুক্তভোগী ক্রেতা। বিকেলে ফোন করা হলে জানাচ্ছি বলে লাইন কেটে দেয়। এরপর যতবার ফোন করা হয়েছে ততবারই লাইন কেটে দেয়া হয়েছে।
এদিকে অনলাইন ইউনিক শপের ফেসবুক পেইজে ক্রেতা রাইয়াতকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি তাদের কোনো ঠিকানা ও পরিচয় কোনো ক্রেতাকে দিতে নারাজ। তারা অর্ডার ডেলিভারী দেয় এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। সেই প্রোডাক্টটি তারা এলিফ্যান্ট রোড এস এ পরিবহন শাখা থেকে পাঠিয়েছে বলে জানান মহাখালী এস এ পরিবহন শাখা। কুরিয়ারে মারিয়া টেলিকম নামের যে দোকানটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে চকরিয়া পৌরসভা মার্কেটে ওই নামে কোনো মোবাইলের দোকান নেই বলে জানান আমাদের চকরিয়া প্রতিনিধি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটি এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোথাও বসে গোপনে তাদের এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা ঢাকার ভিতর থেকে মোবাইল অর্ডার করে তাদের মারিয়া টেলিকম নামের ভুয়া রশিদ ব্যবহার করে এস এ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের সহায়তায় পণ্য ডেলিভারী করে থাকে। এই মোবাইলটি তারা পাঠিয়েছে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড শাখার এস এ পরিবহন থেকে (যার রশিদ নাম্বার 37855) এবং যে নাম্বার থেকে পাঠানো হয়েছে সেই নাম্বারটি হলো 01751306246। এ বিষয়ে এস এ পরিবহনের মতো একটি নামকরা কুরিয়ার সার্ভিসেরও সতর্ক হওয়া উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
একটি ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে এই প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের ঠকিয়ে যাচ্ছে বলে আরও অনেকে অভিযোগ করেন।
এভাবে গ্রাহক ঠকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে এই অবৈধ ব্যবসা করছে অনলাইন ইউনিক শপ বলে জানান কিছু গ্রাহক। আকর্ষণীয় ছবি ও লোভনীয় বিবরণ দিয়ে সাধারণ ক্রেতাকে উদ্ধুদ্ধ করে অর্ডার নিয়ে নষ্ট অথবা অন্য কোনো মডেলের মোবাইল পাঠাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের ফেসবুক পেইজ চেক করে দেখা গেছে ১ লাখ ৫ হাজারের বেশি লাইক-ফলোয়ার আছে।
অনেকে জানান, দুই নম্বরী মতলব না থাকলে এরা কখনোই ঢাকার ভিতরে কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রোডাক্ট লেনদেন করতো না। এদের ব্যবসাটাই দুই নাম্বার। এদেরকে অচিরেই আইনের আওতায় আনা হোক।
ভুক্তভোগী ক্রেতা রাইয়াত জানান, যদি ভুলে একটার জায়গায় আরেকটা মোবাইল পাঠানো হয়ে থাকে। তাহলে তারা সেটার সমাধান না দিয়ে কেনো মোবাইলের লাইন কেটে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে তেজগাঁও থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনে বলেন, অভিযোগকারীকে বলেন থানায় ইনফর্ম করতে আমরা দ্রুত এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশান নেবো।