reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১১ জানুয়ারি, ২০১৮

খুলনায় দুর্নীতিতে ডুবছে পাউবোর ড্রেজার বিভাগ

কাজ না করেই কর্মকর্তাদের টিএ ও ডিএ বিল উত্তোলন | কর্মচারীদের ক্ষোভ

সীমাহীনা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ড্রেজার বিভাগ। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের (সিবিএ) শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাস্টার রোলে লোক নিয়োগ, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভুয়া বিল পরিশোধ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

পাশাপাশি নদীতে ড্রেজার কাত হয়ে পড়ছে বা আংশিক ডুবে যাচ্ছে এসব কথা জানিয়ে খাতা-কলমে কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে করা ক্ষুব্ধ কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভুয়া বিল-ভাউচারে অতিরিক্ত সাড়ে ছয় কোটি টাকা গ্রহণ করায় একজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নগরীর লবণচরা এলাকায় প্রায় ১১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কার্যালয়। এখানে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী ও বিভিন্ন কর্মকর্তার কক্ষ থাকলেও কেউই অফিসমুখী হন না। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকেন নারায়ণগঞ্জ, নির্বাহী প্রকৌশলী খুলনা জেল ঘাট এলাকার যান্ত্রিক বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে আর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম নবী বেশির ভাগ সময় থাকেন ঢাকার বাসায়। জানা গেছে, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম নবী একই কর্মস্থলে প্রায় ১২ বছর সময় পার করেছেন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার মির্জাপুরে বিলাসবহুল বাড়িও করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনায় বর্তমানে কোনো কাজ না থাকলেও ঠিকাদারী কাজের বিল বাবদ ৫৮ লাখ ৬৭ হাজার ৩১১ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এই টাকার বড় অংশ ঠিকাদারী কাজের ভুয়া বিল। অভিযোগ রয়েছে, কাজ না করে এসব টাকা ড্রেজার বিভাগের কর্মকর্তারা লোপাট করেছেন।

লস্কর পদে মহিলা কর্মী : নৌযানের দড়ি-কাছি বাঁধার জন্য লস্কর থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এই পদটি পুরুষের জন্য নির্ধারিত। কিন্তু খুলনায় ড্রেজার বিভাগে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। তারা কেউই নৌযানে থাকেন না। কাজ না করে বেতন নেন, আর বেতনের একটি অংশ যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম খান বলেন, লস্কর পদে মহিলাদের আবেদন করাও উচিত না। তবে নিয়োগ বোর্ড নিয়োগ দিলে তাদের করার কিছু থাকে না।

সিবিএ নেতার দাপট : সিবিএ নেতার দাপটে আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি মাস্টাররোলের কর্মচারী জহিরুল ইসলামের হাজিরায় স্বাক্ষর করেন। অথচ জহিরুল ইসলাম কোনো দিন অফিসেই আসেন না। কর্মকর্তারা অবৈধ বিল উত্তোলন করেন, তাই সিবিএকে কিছু ভাগ দেওয়ার জন্য এই সুযোগটা দেওয়া হয়েছে। যা এখন সবাই জানেন। সম্প্রতি সিবিএ’র নেতা হয়েও তিনি ড্রেজার বিভাগের ব্যারাক নির্মাণের তিন লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজ করেছেন।

নদীর তীর রক্ষা কাজে অনিয়ম : ২০১৭ সালের আগস্টে কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর ভাঙন রক্ষায় ‘ব্যাম্বু পাইলিং ও গ্যানি ব্যাগ স্থাপন’ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয় আছিয়া এন্টারপ্রাইজকে। ৩০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো সেই কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ঠিকাদারের নামে নিজেই কাজ করছেন। এছাড়া নির্ধারিত সময়ে সিমেন্ট না দেওয়াই তা জমাট বাঁধছে না। নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম খান জানান, নিম্নমানের কাজ হওয়ায় তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন। জানা গেছে, ড্রেজার বিভাগের খুলনার কর্মকর্তাদের কাজ না থাকলেও নিয়মিত টিএ ও ডিএ বিল উত্তোলন করা হয়। পাশাপাশি নদীতে ড্রেজার কাত হয়ে পড়ছে বা আংশিক ডুবে যাচ্ছেÑ এসব কথা জানিয়ে খাতা-কলমে কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্নীতি : অভিযোগ রয়েছে, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ৪২০ একর ভূমি ৫ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় উন্নয়ন কাজে চুক্তি অনুযায়ী, কাজ না করায় খুলনা ড্রেজার বিভাগের কাছে ছয় কোটি ৪৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা ফেরত দাবি করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদকে বরখাস্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেন।

কর্মকর্তাদের অভিমত : এ ব্যাপারে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোলাম নবী বলেন, এই দফতরে কোনো কাজ নেই গত ৩-৪ বছর ধরে। তবে কাজ না থাকলেও মাস্টাররোলে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টাকার বিল প্রদানের কথা তিনি স্বীকার করেন। রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ না করে সাড়ে ছয় কোটি টাকা গ্রহণ ও ফেরত দানের চিঠির কথা স্বীকার করেন। ড্রেজার বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সামছুদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, এখানে কাজে যোগদানের পর বিষয়টি তার নজরে এসেছে। তিনি এসব অভিযোগ যাচাই-বাচাই করছেন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাউবো,ভুয়া বিল,দুর্নীতি,রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র,খুলনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist