ইসলামপুর প্রতিনিধি

  ০৮ জানুয়ারি, ২০১৮

হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে জালিয়াতি, ২ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলো থেকে হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে জালিয়াতি করে আদায়কৃত দুই কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে গ্রাস রুট প্রজেক্ট নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সহযোগিতা ছিল বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা তোলার সময় গ্রাস রুট প্রজেক্টের কর্মীদের সঙ্গে ছিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের লোক। এ কারণে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে, গণহারে টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনার পরে এখনো নীরব রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে কর আদায় করা হচ্ছে দাবি করত গ্রাস রুট প্রজেক্ট। সরকারি হিসাব মতে, ওই উপজেলায় ৯৩ হাজার ৪৫৬টি খানা (পরিবার) রয়েছে। খানা প্রতি গড়ে ২০০ টাকা হারে নেওয়া হলে মোট অঙ্ক দাঁড়ায় এক কোটি ৮৬ লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা। সংস্থাটির এমডি দ্বীন ইসলাম গত মঙ্গলবার গভীর রাতে তার কর্মীবাহিনী ও টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।

সরেজমিনে পার্থশী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রাস রুট প্রজেক্ট নামের এ বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা সেখানকার প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে খানা প্রতি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করে, বিনিময়ে একটি করে হোল্ডিং নম্বর প্লেট প্রদান করে। প্রজেক্টের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে তারা পালানোর চেষ্টা করে। পরে জনতার সহায়তায় তাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, ‘আমরা গ্রাস রুট প্রজেক্টে চাকরি করি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নির্দেশে টাকা তোলা হচ্ছে। এর বাইরে আমরা কিছু বলতে পারব না। যা বলার আমাদের এমডি এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।’

যোগাযোগ করা হলে গ্রাস রুট প্রজেক্টের এমডি দ্বীন ইসলাম জানান, রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশেই আমরা ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং ট্যাক্স প্লেট নম্বর প্রদান করছি। এ জন্য খানাপ্রতি ১০০ টাকা করে কর নিচ্ছি। এই টাকার বড় একটি অংশ চেয়ারম্যানের পকেটে যাচ্ছে। আমাদের টিমের নয়জন কর্মী নিয়ে বিদায়ী বছরের জুন মাসে প্রথমে ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নে কাজ শুরু করি, কিন্তু লাভের মুখ দেখা গেলে সেখানে কাজ শেষ না হতেই আরো কয়েকটি ইউনিয়নে কাজের কন্ট্রাক্ট করি। এগুলো হলো- ইসলামপুর সদর, পলবান্ধা, চরপুঁটিমারী, চরগোয়ালিনি, চিনাডুলী, গোয়ালেচর ইউনিয়ন, সেখানে কাজ করার পর এখন পার্থশী ইউনিয়নে কাজ করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ‘আমি চেয়ারম্যানদের বলে দেব এ ধরনের প্রতারক আসলে তাদের আটকে রেখে আমাকে খবর দিতে। আর নতুন করে এখন হোল্ডিং ট্যাক্সের নাম করে টাকা ওঠালে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পাথর্শী ইউনিয়নের আদির আগলা গ্রামের ইসহাক মন্ডল বলেন, তার ঘর আধাপাকা, এ জন্য ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে। শাহিন মিয়া নামের আরেকজন বলেন, তাকেও ৪৭০ টাকা দিতে হয়েছে। চিনাডুলি ইউনিয়নের পশ্চিম বামনা গ্রামের আ. খালেক, মুসলিম শেখ, রফিকুল ইসলাম, দুলাল মিয়া আনারুল ইসলামসহ আরো অনেকেই ১০০ টাকা দিয়েছেন। এছাড়াও পলবান্ধা, গাইবান্ধা, চরপুঁটিমারি ও গোয়ালেচর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা একই কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ মোমেনের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে ঘরে ঘরে কর আদায়ের জন্য আমাদের কোনো ধরনের নির্দেশনা নেই। কেউ যদি টাকা তোলে সেটি হবে প্রতারণা। পলবান্ধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন স্বাধীন বলেন, ‘তাদের আমি কাজ করার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হচ্ছে না বলে অর্ধেক কাজ করে তারা চলে গেছে।’

পার্থশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বলেন, প্রায় সবগুলো ইউনিয়নে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করেছে তাদের দিয়েই মূলত পরিষদের কর আদায় করা হচ্ছে। ৫০ শতাংশ হারে বেতন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, তাদেরকে টাকা উত্তোলনের ২০ শতাংশ হারে দেওয়া হবে। অর্থাৎ ১০০ টাকার ২০ শতাংশ তাদের বেতন হিসেবে দেওয়া হচ্ছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হোল্ডিং ট্যাক্স,জালিয়াতি,জামালপুর,প্রতারক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist