মহসীন শেখ, কক্সবাজার
কক্সবাজারে বন উজাড় : রক্ষকই যেখানে ভক্ষক!
উজাড় হচ্ছে কক্সবাজারের সংরক্ষিত বন। প্রতিনিয়তই কাটা হচ্ছে মাদার ট্রি গর্জন ও সেগুন গাছ। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহ আগে খুটাখালি বন বিটের ছনখোলার ভিলেজার আবদুল কাদেরের জমির পাশে চারটি শতবর্ষী গর্জন (মাদার ট্রি) কেটে নেওয়া হয়েছে। এসব গাছ কাটা হচ্ছে বন বিভাগের নাকের ডগায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকছেন নীরব। কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করছেন না।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গাছ কাটার সঙ্গে বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক সরাসরি জড়িত। শুধু তাই নয়, গাছ চোরের সঙ্গে তার ‘বোঝাপড়া’ রয়েছে। গাছ চেরায় করতে করাত কল মালিক এবং পাহাড় কাটার জন্য ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে রয়েছে তার ‘গোপন সমঝোতা’। একই অভিযোগ পরিবেশবাদীদের।
জানা গেছে, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের খুটাখালি বিটে ২০১৫ সালে বিট কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন ফরেস্টার আবদুর রাজ্জাক। পরে ২০১৭ সালের মার্চে ফুলছড়ি রেঞ্জের অতিরিক্ত দায়িত্বও পান তিনি। চট্টগ্রাম অঞ্চলেই ঘুরে ফিরে তিনি চাকরি করছেন ১৪ বছর ধরে। একসঙ্গে বিট ও রেঞ্জের দুই দায়িত্ব পেয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেন। আর তার হাত দিয়েই বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফরেস্টার আবদুর রাজ্জাক খুটাখালি বন বিটে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মাদার ট্রি গর্জন ও সেগুন গাছ কাটা পড়ছে আগের চেয়ে বেশি। এছাড়া পাহাড়ি ছরা থেকে বালি উত্তোলন, পাহাড় কাটা, বনভূমি বিক্রি, করাত কল পরিচালনা, ডাম্পার মালিকদের সঙ্গে মাসিক টাকার চুক্তিসহ সামাজিক বনায়নে প্লট দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বনখেকোদের সঙ্গে তার গভীর সখ্য রয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, তার ইশারা ছাড়া কোনো গাছই কাটা হয় না। গাছ কাটা রোধে তিনি কোনো পদক্ষেপই নেন না। গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর জানাজানি হলে বলা হয়, চুরি করে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে তার হাত দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত মাদার ট্রি গর্জন ও সেগুন গাছ বিক্রি হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ফুলছড়ি রেঞ্জে বেশ কয়েকটি করাত কলে নির্বিঘ্নে বনাঞ্চলের গাছ চেরাই করা হলেও কোনো অভিযান চালানো হয় না। এমনকি কক্সবাজার থেকে কোনো অভিযানে গেলে তাও ফাঁস করে দেন তিনি। এছাড়া আবদুল খালেক নামের একজনের জব্দ করা করাত কল আবারও চালু করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া জব্দ করা করাত কল বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সর্বশেষ খুটাখালী ফুলছড়ি বনবিটে পূর্ব নয়াপাড়া এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় কাটার ঘটনায় বনবিট কর্মকর্তা ক্লোজ হলেও পার পেয়ে গেছেন আবদুর রাজ্জাক। পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বনভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে কেউ ধরা পড়লেই কৌশলে নিজেকে রক্ষা করেন তিনি। তিনি চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ফটিকছড়ি, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলেই ঘুরে ফিরে গত ১৪ বছর ধরে চাকরি করছেন। এ জন্য তার সহকর্মীরাও রীতিমতো ক্ষুব্ধ। এসব সহকর্মীর মাসিক বেতন-ভাতার টাকা থেকেও আবদুর রাজ্জাক একটি অংশ কেটে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কারণে গাছ কাটা, পাহাড় কাটা ও বনভূমি দখল করতে পারছে না একটি চক্র। আর তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’ এদিকে, রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা নেওয়ায় আবদুর রাজ্জাকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়েস কক্সবাজার।
পিডিএসও/হেলাল