মনি হায়দার

  ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

স. ম. শামসুল আলমের গল্প

সংবেদের নতুন রূপায়ণ

জীবনের অন্য নাম গল্প। গল্পই জীবনের গতি, প্রকৃতি আর নিয়তি। গল্প আছে, তাই সংসার আছে। গল্পের চরিত্রের মধ্য দিয়ে আমরা সমকালকে পাই, পাই ফেলে আসা দিনের দিনলিপিও। এ কারণে গল্প আমাদের জীবনের ধারাপাত। গল্প আমাদের শেখায় প্রেম, বিরহ, প্রগাঢ় ভালোবাসা। অন্যপিঠে শেখায় মানুষের ভেতরের মনুষ্যহীনতা, বিবমিষা, ঘৃণা আর প্রত্যাখ্যানের অমিত চাবুকের ধার। আমি তো চোখের পাতা খুললেই দেখতে পাই অজস্র গল্প। গল্পেরা গলাগলি করে খলবল হাসতে হাসতে যায় নাইওরে। আবার দেখি বিধবা ধর্ষিতা বোনটি আমার গল্পের চরিত্র হয়ে বিষণ্ন কাঁদে। সব, সবই গল্পের আধার ও আধেয়। পৃথিবীর আদি পর্বে ছিল কেবল গল্প আর গল্প আর গল্প। আমরা আদি পর্ব পার হয়ে আধুনিকতার জঙ্গনামায় প্রবেশ করেছি। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে গল্পও নিয়েছে নতুন বাঁক প্রতিমার ভঙ্গি। গল্প ঠিকই আছে কেবল পাল্টে গেছে কাঠামো আর আখ্যানের ভূগোল। সেই ভূগোলের সূত্র ধরে আমি গল্পকার স. ম. শামুসল আলমের গল্প ভুবনে প্রবেশ করছি।

স. ম. শামসুল আলমের দুটি গল্পের বই আমার টেবিলে। মাসখানেক ধরে পড়ছি দুটি বইয়ের গল্পগুলো। ২০১২ সালে অমর একুশের বইমেলায় সাহিত্য দেশ থেকে প্রকাশিত বইটির নাম-‘শরীরী উপাখ্যান’। ‘শরীরী উপাখ্যান’ বইটিতে আছে বারোটি গল্প। যথাক্রমে গল্পগুলোর নাম- শরীরী উপাখ্যান, কাঁচা বউ, অন্যরকম প্রস্তুতি, আঁচ, নখ, আঁচড়, বিষণ্ন জনক, জড়জীবন ও লাল টেবিল, আজকের প্রজন্ম, ক্রোধের কবিতা, অনন্ত আঁধারে ও অন্য আগুন।

দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ-‘একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের খসড়া’। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ২০১৫ সালের অমর একুশের বইমেলায় প্রকাশিত বইটিতে ষোলোটি গল্প আছে। গল্পগুলো যথাক্রমে-একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের খসড়া, পূর্বেই জানিয়ে দেওয়া গল্পের নাম পঞ্চমী, পীর সাহেব ও পাখার বাতাস, চলন্ত পথিক, ভিলেজ ভিডিও, একটি গল্প লেখার প্রস্তুতি, লাইনম্যান ও একটি লজ্জাজনক মৃত্যু, ঘুঙোর বসতি, একটি টি-শার্ট কেনার মুহূর্তগুলো, সরল ধিক্কার, ত্রিশূল, ঈদ কার্ড, গ্রিন লাইন টু এয়ারলাইন, ব্যবধান, কবির ক্রোধ এবং একজন মিরধা ভাই অথবা তার বন্ধু।

মানুষ, নারী বা পুরুষের শেষ ঠিকানা-শরীর। শরীরের ওপর ভর করে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে, সুকর্ম-কুকর্ম যা যা করার, প্রিয় এই শরীর কাঠামোর ওপর ভরসা করেই করে। আবার পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের আবির্ভাব এই শরীর কারখানা থেকেই। এই শরীর আছে বলেই তো এত প্রেম, এত ভালোবাসা, এত রাগ-অনুরাগ। আবার সতী-অসতীর পরম ঠিকানাও এই শরীর, বিশেষ করে নারীর শরীর।

গল্পকার স. ম. শামুসল আলম নিয়তিকে তর্জনিতে ফেলে লিখেছেন ‘শরীরী উপাখ্যান’ গল্প। আসিফ গল্পের প্রধান চরিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। এখন গ্রামের বাড়িতে থাকে, গ্রামে থেকে একটা কিছু করবে। চমৎকার চিন্তা। কিন্তু আসিফ তো একা নয়, আসিফের সঙ্গে একটা শরীরও আছে। সেই শরীরে যৌবন আছে। যৌবনের সঙ্গে আছে একটা শিশ্ন। গ্রামের বিবাহিত মেয়ে ইভার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে আসিফের। ইভার স্বামী থাকে বিদেশে। সুযোগটা নেয় আসিফ, নেয় কাম কাতর ইভাও।

গ্রামের আর একটি মেয়ে মারজানার সঙ্গে আসিফ জড়িয়ে পড়ে শারীরিক সংরাগে। সেই সংরাগের যোগ-বিয়োগে মারজানার পেটে আসে ভ্রুণ। আসিফ বাজার থেকে ওষুধ এনে খাওয়ায়। এদিকে আসিফের মামা এসেছে ভাগ্নের বিয়ের ঘটকালি নিয়ে। কিন্তু বিয়ের আগে মামাকে জানায় আসিফ-‘সে এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করতে চায় যে হবে একেবারে গ্রাম্য আর সহজ-সরল। লেখাপড়া না জানলেও চলবে, তবে খুব সুন্দরী হতে হবে। মামা অল্প কথায় বুঝে যায়, যে মেয়ে কোনো ছেলের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পায়নি, মামার ভাগ্নে আসিফ তেমন একটি মেয়েই চায়।

মামা বলল, ঠিক আছে। আমার জানাশোনা তেমন একটা মেয়ে আছে। তোকে সঙ্গে নিয়ে যাব দেখাতে। মামা এক সময় রাস্তার কন্ট্রাক্টরি করতেন উপজেলার মতো এলাকায়। সেই এলাকায় অনেকটা গ্রামের ভেতরের পরিচিত আফজালের বাড়িতে ওঠেন। আফজালের মেয়ে আকলিমাকে দেখেই আসিফের পছন্দ হয়ে যায়। আসিফ স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানায়, এমন কচি লজ্জায় আনত একটি মেয়েকে বৌ হিসেবে পাওয়ার জন্য। বিয়ে হয়ে যায়। গ্রাম্য মেয়ে আকলিমাকে নিয়ে আসিফ বাড়ি ফিরছে। শুভবিবাহ লেখা ওদের বহনকারী বাসটা দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর পর আকলিমা দেখাল আসিফকে একটি দৃশ্য। দৌলতদিয়া ঘাটের পাশে ঝুপড়ি ঘরের সামনে দিনদুপুরে একটি মেয়ে একটি ছেলে ঝাঁপটা-ঝাঁপটি করছে। আসিফ জানায়, ওরা বেশ্যা। বেশ্যারা টাকা নিয়ে পর পুরুষদের সঙ্গে...। আকলিমা জিজ্ঞেস করে, কয় টাকা নেয় জানেন?

তার কোনো ঠিক নেই। জবাব দেয় আসিফ-পাঁচ-দশ থেকে শুরু করে পাঁচ-দশ হাজার এমনকি লাখ টাকাও হতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে।

এত টেকা? তাইলেতো হালিম ভাই আর কাশেম ভাইয়ের কাছে আমার ম্যালা টেকা পাওনা আছে।

আসিফের মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।

গল্পটির দুটি দিক, একটি নিয়তিবাদ। তুমি শালা ঘুঘু বারবার ধান খেয়ে যাবে, ধরা একবারও পড়বে না, সৃষ্টিকর্তা এমন বিধান কোথাও রাখেননি। সৃষ্টির নিয়মে, তোমাকেও খেতে হবে গান্ধাফল। যেহেতু তুমি অনেক ফুলে আঁচড় দিয়েছ। তোমার নিজের জন্য যে ফল তুমি সংগ্রহ করবে, যত বেছে সাবধানেই কুড়াও না কেন, নিয়তির গামছায় তোমার জন্য বান্ধা আছে, গান্ধা টক ফল। এড়ানোর সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়টি মানুষের শরীর, হোক সে নারী-পুরুষ-কোথায় কখন নোঙর ফেলবে শরীর তরঙ্গের তটে, বোঝা মুশকিল। গ্রাম্য মেয়ে বলে আকলিমার শরীর সুখ-আনন্দ বুঝবে না, হতে পারে না। শরীর এক বিশাল অগ্নিকুন্ডু। শরীরের এই কুন্ডুকে হয়তো দেখা যায় না খালি চোখে, কিন্তু নিরন্তর বহে লাভা স্রোত, প্রকৃতির খেয়ালে। সেই আকলিমা, আকলিমা তো সুযোগ পেলেই ঝাঁপ দেবে। স. ম. শামসুল আলম নিয়তি কিংবা বাস্তব দুটোকে সমান্তরাল রেখে, চমৎকার একটি গল্প লিখেছেন। গল্পের আখ্যানকে সামনে নিয়ে আমরা লিখতে পারি, সবার ওপর শরীর সত্য।

‘কাঁচা বউ’ ‘শরীরী উপাখ্যান’ গল্প বইয়ের দ্বিতীয় গল্প। মানুষ ভুল বুঝে কত বড় ভুল করতে পারে বা হারাতে পারে পবিত্র প্রেম, তারই নৈবেদ্য এঁেকছেন এই গল্পে গল্পকার স. ম. শামসুল আলম। না, শেষ পর্যন্ত হারিয়ে যায়নি, কিন্তু পাওয়ার জন্য সাধনা করতে হয়েছে নায়ককে। উত্তম পুরুষে লেখা কাঁচা বউ গল্পের নায়ক আমাদের জানান, বিয়ে করেছে বেচারা। ছুটি মাত্র দুই দিন। যা করার এই দুই দিনের মধ্যে করতে হবে নতুন বউয়ের সঙ্গে। কিন্তু বউয়ের কিছু করার বিষয়ে কোনো আগ্রই নেই। বেচারা নায়ক যখন বউয়ের কাছে নিজের দাবি উত্থাপন করল, বউ জানায়, লাল পতাকা চলছে।

মনোকষ্ট নিয়ে নায়ক সকালেই ঢাকা চলে আসে। বুঝতে পারল না, মনোবেদনায় স্বামীর দুই দিন আগে চলে যাওয়ায় বউয়ের কোনো প্রতিক্রিয়া। বেচারা স্বামী বেহায়ার মতো শেষবার বলে, আমি কিন্তু ঢাকা চলে যাচ্ছি।

নতুন বউয়ের উত্তর, আচ্ছা, আবার আসবেন।

বেচারা নায়কের আর কী করার আছে? লেজ গুটিয়ে চলে আসা ছাড়া? ‘কাঁচা বউ’ গল্পের নায়ক চাকরিজীবী। তাকে ট্রান্সফার করে পাঠানো হয়েছে চিরিরবন্দরে। সেখানে যাওয়ার আগে বেহায়ার মতো পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে আবার বাড়ি এসেছে। কিন্তু ‘কাঁচা বউ’ কাঁচাই, একটুও পাকেনি। ঘটনার এক ফাঁকে নায়ক বউয়ের ব্লাউস ছিঁড়ে ফেলে। এখন নায়কের কথা : ‘কাঁচুলির ভেতরে দুটি ভাসমান বস্তু নিয়ে স্থির বসে থাকে সে। শাড়ি দিয়ে ঢাকার চেষ্টাও করে না। হয়তো ক্ষোভে ফেটে পড়ছে অথবা খুলে রাখার সাহস দেখাচ্ছে। কিন্তু আমি তার মনের অবস্থা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। এইটুকু বুঝলাম, এ রকম বউ নিয়ে ঘর-সংসার করা সম্ভব নয়। হয় তাকে বিদায় করতে হবে, নয় নিজেকেই কেটে পড়তে হবে। কিন্তু এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময়ের প্রয়োজন।’

স. ম. শামসুল আলমের গল্প ‘কাঁচা বউ’য়ের নায়ক গোঁ ধরে চলে গেল চিরিরবন্দর। সেখানে সহকর্মী দীপক বাবু, তার স্ত্রী ও সন্তান আদিত্যর সংসারের সঙ্গে দাদা ও বউদি নিয়ে মিশে গেল। এবং সেখানে প্রতিবেশী অষ্টাদশী তানজিমকে বৌদি প্রস্তুত করে নায়কের জন্য। কিন্তু আমাদের গল্পের নায়ক ন্যায়নিষ্ঠ এবং মানবিক বোধের অধিকারী। বৌদিকে কাঁচা বৌয়ের ঘটনা জানায়। বৌদি প্রথমে আহত হলেও নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং বউয়ের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু নায়ক যেতে চায় না। এমনকি ঈদও চিরিরবন্দরে কাটানোর চিন্তা করে। কিন্তু দীপক আর বৌদির প্রেরণায় ঈদে বাড়ি এলো নায়ক। ঈদে বউয়ের জন্য শাড়ি এনেছে কিন্তু শাড়ির প্রতি খেয়াল নেই বউয়ের। নায়কের রাগ পা থেকে মাথায় উঠল।

পরের গল্প : তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়ালাম। আমার চোখেমুখে রাগের আগুন। সে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে মোলায়েম স্বরে বলল, আপনাকে আমার ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আপনার চেহারা দেখলে আমি সব ভুলে যাই, কিভাবে কী করলে বা কী বললে আপনি খুশি হন, তা বুঝে উঠতে পারি না। মনে হচ্ছে, আপনার ভীষণ রাগ, আমি একটা চুমো দেব? যদি বলেন তো দিই।

চুমো কি বলে কয়ে দিবার বিষয়? আমার মুখের আদল বুঝি পাল্টে গেল। মেয়েটা আসলেই নির্বোধ। আমি আরো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছি। সে বলল, দেব?

দাও।

কোথায়?

আমার মাথায়, বিরক্ত হয়ে বললাম-কোথায় চুমো দেবে সেটাও বলে দিতে হবে?

সে কাছে সরে এসে কাঁপা হাতে আমার বাহু ধরল এবং ঠোঁট বাড়াল। তার চোখ ছল ছল। মনে হলো, আমি অনুমতি না দিলে যুগ যুগ অপেক্ষা করত।

মানবসংসার নারী-পুরুষের প্রেম, প্রেমের গাঙ্গ শরীর কত বিচিত্র প্রেক্ষণে মধুভা হয়ে ধরা দেয়, স. ম. শামসুল আলম, ‘কাঁচা বউ’ গল্পে চমৎকার মুন্সিয়ানার সঙ্গে দেখিয়েছেন। এবং ধৈর্য মানুষের জীবনে সুখের ও সম্ভোগের নতুন উপমা এনে দেয়। যদিও গল্প, কিন্ত মানুষের প্রতিদিনের জীবনের জায়নামাজ থেকে নেওয়া হয় গল্পের আখ্যান। মানবের বোধ, কল্যাণ ও সুন্দরের চিত্রণে আক্রান্ত। গল্পকার, মানুষের জীবনের লুকানো সুন্দরকে পরম দক্ষতায় এই গল্পে তুলে ধরেছেন।

এই দেশটা, বাংলাদেশটা দাঁড়িয়ে আছে ১৯৭১ সালের লাখ লাখ মুক্তিযোদ্ধার রক্তের ওপর। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ পৃথিবীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিরল। সেই বিরল এবং অসাধারণ ঘটনা সাক্ষী রক্তের আখরে আঁকা বাংলাদেশ, সেই কালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আর বিশ্ববাসী। অমর অমিত তেজ আর সাহসী চাবুকে মোড়ানো দুর্দান্ত এক মুক্তিযোদ্ধার গল্প লিখেছেন গল্পকার স. ম. শামসুল আলম।

‘একজন মিরধা ভাই অথবা তার বন্ধু’ গল্পে একজন মুক্তিযোদ্ধার চেতনালোকে, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কতটা মিশে আছেন, তারই সবাক চিত্রনাট্য। মিরধা ভাইয়ের চরিত্র তৈরি করার মধ্য দিয়ে স. ম. শামসুল আলম দেখিয়েছেন, এই মাটির ভূমিপুত্র, ইতিহাসের রাখাল রাজা, বাইগার নদীর তীরের সোঁদা মাটি জলের প্রবহমান স্রোতের ভেতর থেকে উঠে আসা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এ দেশের সাধারণ মানুষ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা কতটা ভালোবাসেন।

মিরধা ভাই গ্রামীণ আটপৌরে মানুষ। গ্রামের মানুষের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টায়-আনন্দে মিলেমিশে নিজেকে একাকার করে দিয়েছে। মিরধা ভাই একাত্তরে পাকিস্তানি হায়েনা হারামজাদা সৈন্যদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধ করেছে, নিজেও ভুলে গেছে, গ্রামবাসীও ভুলে গেছে। কারণ মিরধা ভাইয়ের সহজ-সরল জীবনাচরণ। কিন্তু একটা ব্যাপার, মিরধা ভাইয়ের সামনে কেউ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বলতে পারে না। বললেই মিরধা ভাই ক্ষেপে ওঠে। প্রতিবাদ করে। মিরধা ভাই বঙ্গবন্ধুকে কেবল বাংলা ও বাঙালির বন্ধু মনে করে না, মনে করে নিজের বন্ধু। বঙ্গবন্ধু অন্তপ্রাণ মিরধা ভাই মরণের নিয়মে এক দিন মারা গেলেন। যেহেতু মিরধা ভাই মুক্তিযোদ্ধা। গ্রামবাসী অপেক্ষা করছে, থানার পুলিশের জন্য। থানার পুলিশ এসে মিরধা ভাইকে রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানাবে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় মিরধা ভাইয়ের নাম নেই। রাষ্ট্র বড় ভয়ানক জিনিস। এখানে আবেগের কোনো স্থান নেই। যেহেতু রাষ্ট্রের তালিকায় মিরধা ভাইয়ের নাম নেই, সুতরাং মিরধা ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর যে দাড়ি কাটে নাই, সেই মানুষটি, উদার চিত্তের অকুতোভয় মিরধা ভাই পাবে না রাষ্ট্রীয় অভিবাদন!

আমাদের গল্পকার স. ম. শামসুল আলম মিরধা ভাই ও ভাইদের অপমান মানতে পারেননি। স. ম. গল্পকার। গল্পের আখ্যান ও চরিত্র তৈরি করে। ভয় কি মরণে! গল্পের কলকব্জায় স. ম. শামসুল আলম প্রমাণ করলেন, আমিও যোদ্ধা কলমের এবং মুক্তিযুদ্ধের।

বিচিত্র গল্পের আখ্যানে সাজানো স. ম. শামসুল আলমের গল্পগুলো। সহজ-সরল আঙ্গিকে, নিবিড় মননে গল্প লেখেন স. ম. শামসুল আলম। তার গল্পের মধ্য দিয়ে চিরায়ত বাংলার রূপ-রস আর মাধুর্য ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। আর আলম তো শুধু গল্প লেখেন না, সাহিত্যের বিচিত্র জগতের সারথি। আমার ধারণা, সব অঙ্গনের চেয়ে স. ম. শামসুল আলমের হাতে গল্প দারুণ নৃত্য করে। গল্পের দিকে আরো মনোনিবেশ করলে, আমাদের কথাসাহিত্য সমৃদ্ধ হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স. ম. শামসুল আলম,গল্প,সাহিত্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist