reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট, ২০১৭

স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান

কবি শামসুর রাহমান। বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই কবির একাদশ মৃত্যুবার্ষিকী দিবস আজ ১৭ আগস্ট। কবি ২০০৬ সালের এইদিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় পরলোক গমন করেন। কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে দুই বাংলায় তার শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। তিনি একজন নাগরিক কবি ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তার দুটি কবিতা খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

বিংশ শতকের ত্রিশ দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধান পুরুষ হিসেবে খ্যাতিমান হয়ে আছেন। তার প্রথম কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। কবি শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এরপর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে রুদ্র করোটিতে, বিধ্বস্ত নীলিমা, নিরালোকে বসতি, নিজ বাসভূমে। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, মাতাল ঋতিকসহ মৃত্যুর আগপর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া ৮টি শিশুতোষ ১১টি, গল্পগ্রন্থ ১টি, দুটি উপন্যাস-অক্টোপাস ও অদ্ভুত আঁধার, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ ৯টি, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখণ্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।

তিনি একাধারে কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, কলামিস্ট। দীর্ঘ ছয় দশক কবি এসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবলীল ধারায় লেখালেখি করে বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ অবদান রেখেছেন।

শামছুর রাহমান জন্মগ্রহণ করেন পুরানো ঢাকার মাহুতটুলিতে ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর। বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। কবি শামসুর রাহমান ১৯৫৫ সালের ৮ জুলাই জোহরা বেগমকে বিয়ে করেন। কবির তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। সাংবাদিক হিসেবে ১৯৫৭ সালে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্নিং নিউজে, পরে একাধিক পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭-তে সামরিক সরকারের শাসনামলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বর্ণাঢ্য পেশাগত জীবন ছিল তার।

বাঙালি জাতির স্বাধীনতা প্রাপ্তির চেতনার দীপ্তস্বর উচ্চারিত হলেও কবিতা ও সাংবাদিকতায় মৌলবাদ বিরোধিতায় তিনি ছিলেন সোচ্চার। ধর্মান্ধতাকে কবিতার মধ্যদিয়ে আজীবন প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করেছেন। লিখেছেন প্রেম, দ্রোহ ও বিশ্বজনীনতা বিষয়ে অসংখ্য চিরায়ত কবিতা। তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যার মধ্যে কাব্যগ্রন্থ ৬৬, উপন্যাস ৪, প্রবন্ধ গ্রন্থ ১, ছড়ার বই ১, অনুবাদ ৬।

কবি শামসুর রাহমান অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাকে সম্মানিত করতে পেরে নিজেরা সম্মানিত বোধ করেছে। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে: আদমজী পুরস্কার (১৯৬৩), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৯), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৯১), সাংবাদিকতায় জাপানের মিত্সুবিশি পদক (১৯৯২), ভারতের আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৪)। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। শামসুর রাহমানকে প্রথম বড় মাপের সংবর্ধনা প্রদান করা হয় ১৯৭৯ সালের ২৪ অক্টোবর। পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শামসুর রাহমান সংবর্ধনা পরিষদ বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে তাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করে। কবি ও সাংবাদিক হিসেবে সম্মানিত হয়ে তিনি ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বার্মা (মায়ানমার), জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন।

কবি শামসুর রাহমান বাঙালির আধুনিক কবিদের অন্যতম এক স্বাধীন কবি। এজন্যই তাকে স্বাধীনতার কবি বলা হয়। কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

পিডিএসও/তাজ/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শামসুর রাহমান,কবি,বাংলা সাহিত্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist