আমিন আশরাফ

  ০৯ জুন, ২০১৭

আমাদের গ্যাছে যে দিন

ইতিহাসের সঙ্গে আমার সখ্যতা অনেক পুরনো। কোথাও ইতিহাসের গন্ধ পেলে সে গন্ধের উৎস খুঁজতে মোটেও দেরি করি না। ছোটবেলা থেকে অভাবের সঙ্গে আমার বসবাস। কিন্তু মনটা আজও কখনো দারিদ্র্যতার ছোঁয়া পায়নি। থেকে থেকে সেটা ধনী পোয়াতি মেয়েদের মতো হয়ে উঠেছে।

অনেক কষ্টে মালয়েশিয়াতে অর্থনীতিতে অনার্স পড়তে এসেছি। খরচ জোগাতে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ জুটিয়েছি। বছর দুই যাবত ইচ্ছে করছিল কোথাও বেড়ানোর কিন্তু সময় ও অর্থ দুটোরই অভাব ছিল বেশ প্রকটভাবে। আমার একটা বড় রকমের বাজে অভ্যাস রয়েছে, কোথাও বেড়াতে গেলে কাউকে না কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাই। কিন্তু যাকে যাবার জন্য বলি সে পয়সা না থাকার কথা বলত। তখন বাধ্য হয়ে নিজের জেদ পুরা করতে নিজ খর্চায় কাউকে না কাউকে নিয়ে যেতাম। প্রথম এমনটা হয়েছিল খাগড়াছড়ি ঘুরতে যাবার সময়। বেশিদিন হয়নি এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এক ফ্রেন্ডকে বলতেই সে তেমন একটা উৎসাহ দেখায়নি। অথচ আমি ভালভাবে জানি সে বেড়াতে যাবার জন্য বেশ মুখিয়ে থাকে। তবে আমার যে একটা রুচিশীল সঙ্গী চাই-ই। তোর সব খর্চা আমার যাবি? বলতেই ছেলেটা রাজি হয়ে গেল। তারপর বাড়িতে না বলে সপ্তাহের জন্য হাওয়া। ইচ্ছেমতো ঘুরাঘুরি করেছি আধা সপ্তাহের মতো। খাগড়াছড়ির বৌদ্ধ বিহারসহ বেশ কয়েকটা ঐতিহাসিক নিদর্শনের গন্ধ চাখা হল। যদিও বাড়িতে এসে ফোনের সিগনাল না পাওয়ার কারণে আব্বু-আম্মুর বেশ বকাঝকা খেতে হয়েছিল। আর সঙ্গের ছেলেটি বাড়িতে আসার পর দাঁত খেলিয়ে হেসে বলেছিল, যাবার সময় দশ টাকা পকেটে ছিল এখনও টাকাটা রয়ে গেছে। আমি তখন দশ হাজার টাকার জ্বলুনি কিছুটা হলেও টের পেয়েছিলাম।

এ বিদেশ বিঁভুয়ে বাঙালি কারো সঙ্গে আমার এতোটা দহরম মহরম হয়নি যে, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া যায়। কই যাব! এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে গুগলে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিলাম বেশ ক’মাস যাবত। হঠাৎ একদিন মনে হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপটাউনে যাব। যেই ভাবা সেই কাজ। মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি এমন সময় আমার সেই দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধুটা এল। আরে ক্যাপটাউনে যাব অথচ সেলিনার সাথেই কথা মনেই হলো না। ওর বাড়িও তো ক্যাপটাউনে। কথাটা পাড়তেই সে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। সেলিনার কথাটা পড়েই বলি। কয়েকদিনের দৌড় ঝাপের পর আমরা সব ব্যবস্থাপনা সেরে ক্যাপটাউনের উদ্দেশ্য বিমানে চেপে বসলাম। বিমানে বসে ভাবছিলাম, কোথায় ঘোরা যেতে পারে। সেলিনা বলল, তুমি তো ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো ঘুরতে বেশ পছন্দ করো। তবে আগে আমাদের বাড়ি চল। আমরাই একটা ইতিহাস বহন করে চলেছি। আমি উৎসুক হয়ে তার আরও ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে বললাম, আরে আগে বলবা না! সেলিনার সাথে আমার পরিচয় মালেশিয়ায় আসার পথ থেকেই। লম্বায় মেয়েটি আমার থেকে পাঁচ কি ছ ইঞ্চি বেশি হবে। কুচকুচে কালো গায়ের রঙ। তবে অসম্ভব একটা সৌন্দর্য তার চেহারায় আলো ফেলেছে রেখেছে। কালোটা মাথায় না রাখলে তার ভুবন মোহনী মায়াময় মুখ যে কারো চোখ টানতে বাধ্য। আর কথাবার্তা ও চলা ফেরার ভঙিমার কারণে যে কেউ তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইবে। সেলিনার সঙ্গে একই বিভাগে পড়ি। তার সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার নাটকীয় কোনো ঘটনা না থাকলেও কীভাবে তার সাথে হৃদ্যতার সূত্রপাত হয় সেটা মনে রাখার প্রয়োজন মনে করিনি। আমরা একে-অপরের সবচে ভাল বন্ধু সেটাই বড় সত্যি।

রাতে হোটেলে বসে আর নেট ঘাঁটতে হয়নি। গুগলের কাছে আপাতত তথ্যের জন্য ধর্না দিতে হবে না ভেবে মনে বেশ সান্ত্বনা পেলাম। একবারের জন্য হলেও এই যান্ত্রিক বস্তুটা থেকে দূরে থাকাটা সাধারণ কথা না। ঠিক সময়ে সেলিনার আগমন আমাকে বড় সাহায্য করেছে। ভেবেছিলাম এবার হয়তো আমার একাই ঘুরতে যেতে হবে। নিজের দেশ নয় যে কাউকে বলতেই আমার সঙ্গ দিতে রাজি হয়ে যাবে। মনে মনে সেলিনাকে ধন্যবাদ জানালাম।

রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। ফুল স্পিডে রুমের হিটার চলার পরও একটার জায়গায় দুইটা কম্বল গায়ে জড়িয়েছি। জড়িয়েছি গায়ে সুয়েটারও তারপর মনে হচ্ছে শরীরের কাঁপুনি থামছে না। সকালে রুমের পর্দা সরাতেই চোখে ভেসে উঠল টেবল মাউনটেন আর তার উপর সূর্যের আলোর ঝিলিক, কিন্তু ঘুম ভেঙে যাবার পর দেখি আমার সামনের পুরা পাহাড়ের উপর কে যেন মেঘের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে, পাহাড়ে মেঘ ছাড়া আর কিছুই নেই। পরিষ্কার আবহাওয়ায় হোটেল রুমের পর্দা সরালে যেমন দেখা যায় মেঘ করলেই পাহাড়টা মেঘের চাদরে ঢেকে যায়। এ ব্যাপারটা উপভোগ করাটা হতো না যদি সকাল সকাল সেলিনা পাশের রুম থেকে আমার চোখ খোলে না দিত। ও হোটেলের একটা রুমে থাকতে বলেছিল, একজন উপরে আরেকজন নীচে ফ্লোরিং করলেই হতো। দুটো রুম বুক করার কি দরকার! শত হলেও বাঙালি ছেলে এতোটা সহজ হই কি করে!

আগ থেকে বলে রাখা টেক্সি ড্রাইভার এসে ফোন দিল। সেলিনা বের হওয়ার সময় বলল, আবহাওয়া তেমন একটা সুবিধে হবে না, প্রচণ্ড শীত থাকবে আর বৃষ্টিও হবে। সেজন্য মোটা কাপড় আর ছাতা নিয়ে বের হলাম।

আমরা রঙিন শহর দেখতে বের হই। যা মিউজিয়াম হিসেবে স্কীকৃত । শহরটির নাম বো ক্যাপ। বিমানে এ শহরটির কথাই বলেছিল সেলিনা। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিলাম রঙিন শহরের ইতিহাস। সঙ্গীনীটি সে ইতিহাসের সূর্য সন্তান। রঙিন শহরের ইতিহাস মানেই সেলিনাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস।

বো ক্যাপে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নিলাম শহরের ১২টি মিউজিয়ামের যে কটা পারা যায় দেখে তারপর সেলিনাদের বাড়ি যাব। সেখান থেকে প্ল্যান করার পর বাকি শহর ঘুরব। পেঙ্গুইন দেখার জন্য মনটা আনচান করছে। এ শহরে নাকি ওরা মাঝে মাঝে বরফ ছাড়াই ঘুরে বেড়ায়।

ষোড়শ শতাব্দীর দিকে ডাচরা সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকা শাসন করতো। তারা মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে দাস-দাসীদের নিয়ে আসতো এই বো-ক্যাপে। তাদের বলা হতো ক্যাপ মালে, যদিও তাদের সবাই মালয়েশিয়ার ছিল না। বেশিরভাগই দাস-দাসীরা ছিল মুসলমান। কিন্তু ডাচরা তাদের ধর্মকর্ম করতে বাধা দিত। কাউকে কোনো ধর্মীয় আচার পালন করতে দেখলে কঠিন শাস্তি দেয়া হতো। শিকল পরিয়ে ওদের সবচে কঠিন কাজগুলো করাতো, আর কাজে অবহেলা করলে পিঠে চাবুক মারতো। বিশেষ করে মুসলমান দাসদের নামাজ পড়তে দেখলে তো কথাই নেই। জগতের সবচে কঠিন শাস্তি তাদের উপর ক্যাপটাউনের পাহাড় বেয়ে নেমে আসতো। কিন্তু তাদের ঈমানের জোর ছিল তারচে বেশি মজবুত। দিনভর কাজ করে ক্লান্ত হয়ে, গভীর রাতে দূরের সিগনাল পাহাড়ের উপর গিয়ে পড়তে না পারা নামাজগুলো কাজা পড়ে নিত। প্রায় আশি বছর তারা ডাচদের কাছে ক্রীতদাস হয়ে বন্দি জীবনযাপন করছিল।


আমাদের ঘর পাশাপাশি ছিল। একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। লেখাপড়াও একসঙ্গে। ওর মা আমার আম্মুর সঙ্গে কথা বলে গাঁটছড়া বাধার কথা বলে রেখেছিল। কিন্তু ওর মানসিকতা ছিল অন্য ধাঁচের। কিছুটা বিলাসী টাইপের। মনে মনে বর হিসেবে বিদেশি কাউকে কল্পনা করতো


ঊনিশ পঁচাত্তরের দিকে কোনো এক সকালে ব্রিটিশরা ডাচদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ওরা ক্ষমতা আসার পর আস্তে আস্তে এসব দাসরা কিছুটা স্বাধীনতা পেতে শুরু করে ধর্মীয় ও সামাজিক দিক দিয়ে। একদিন ওরা ক্রীতদাসের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পায়। সেই থেকে এই বো-ক্যাপের দাসরা একটি নতুন কমিউনিটি চালু করেছে যা এখন মালে কোয়ার্টার নামে পরিচিত। এর সিংহভাগ অধিবাসী মুসলিম। সময়ে সময়ে তারা এখানকার জনগণের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। এদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে অনেক স্থানীয় লোকজনও মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং তারা পরস্পর বিয়েতে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। বর্তমানে বো-ক্যাপের লোকজন নিজেদের ক্যাপ মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে। এই বো-ক্যাপেই আছে সাউথ আফ্রিকার প্রথম মসজিদ যা আওয়াল মসজিদ নামে পরিচিত। আছে সেই মসজিদও যে মসজিদে সাউথ আফ্রিকায় সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়েছিল। সেলিনার বাবা সেই মালে কমিউনিটির সবচে প্রবীণ নেতা আবদুল ওয়াহহাব।

বো-ক্যাপে আসার পথে রাস্তার দুইপাশে সারিসারি রঙিনসব বাড়ি যা আমি আগে কখনো দেখিনি। চোখের সামনে বাচ্চাদের পত্রিকায় ছবি আঁকার মতো ঘরবাড়িগুলো দেখে খেই হারানোর জোগার। পাশ থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে সেলিনা বলে যাচ্ছে এ বাড়িটা এত সালের, ওই বাড়িটা! ওই যে লম্বা মতো ঘরটা দেখতে পাচ্ছ না, দেখ এর আয়তন কত বিশাল! ওটা আমার পরদাদার হাতে গড়া। আর বলছে, এইসব রঙিন বাড়িগুলো কত সহজ দাঁড়িয়ে, কিন্তু এর একেকটার ইতিহাস বড়ই করুণ ও বেদনাদায়ক। সারিসারি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়িকে রাখা হয়েছে যাদুঘর হিসাবে, যেখানে ট্যুরিস্টরা সব ধরনের তথ্য পেতে পারে।

ঘুরতে ঘুরতে আমরা বো-ক্যাপের সবচে পুরানো আর আকর্ষনীয় আবদুল আওয়াল মসজিদে চলে এলাম। সেলিনা খুব আনন্দের সঙ্গে যেন আমার সাথে এটা- ওটার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। সব মানুষই নিজের বাড়ি এলে একটু অন্য রকম হয়ে যায়। নিজেকে মনে করে তখন পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ, কেমন জানি আবেগ আপ্লুত হয়ে উঠে। আওয়াল মসজিদের নির্মাণশৈল্য এতোটা আকর্ষণীয়, আমার চোখে এই প্রথম কোনো দৃষ্টিনন্দন মসজিদ পড়ল। সেলিনা বলছিল, এ মসজিদে মুসলিমবিশ্বের সবচে বড় বড় নেতারা প্রায়ই আসেন।

বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আকাশটা ঝকঝকে থালার মতো দেখাচ্ছে। ক্যাপটাউনের আকাশ সকালে বের হওয়ার সময় মেঘের চাদরে ঢাকা থাকলেও এখন তাকে বেশ মোহনীয় মনে হচ্ছে। আওয়াল মসজিদের এপাশ ওপাশটাতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিলাম। কখনো বা সেলফিও।

এই শুনুন! কারো কণ্ঠে চমক। পেছন ফিরে দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। কণ্ঠে বাঙলা অথচ আপদামস্তক ইউরোপিয়ান। মুখের দিকে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছিলাম। আমি গভীরভাবে তাকে দেখছিলাম। মেয়েটি মুচকি হাসছিলাম। হাসিটা দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিনের চেনা। মাথার চুলগুলো কোনো রকম হাওয়াই ছাড়াই উড়ছে। শার্ট প্যান্টের উপর মোটা কোর্ট জড়ান, ইউরোপিয়ান সুটেট বোটেড গার্ল। এর মাঝে দুবার মেয়েটি তার কপাল থেকে অবাধ্য চুলগুলো সরিয়েছে। চুল সরানোর এ ভঙিমা যেন আমার কতকালের মুখস্ত একটা চিত্রায়ন। আমার অবাক চোখের চাহনি দেখে মেয়েটি সেলিনার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, আমি রুমানা। সেলিনাও উষ্ণ সাড়া দেয়।

-এটা আমার জানা ছিল না যে, তুমি আমাকে চিনতে পারবে না। বেশ অবাক হলাম তোমার এ অভূত পরিবর্তন হাসির ফোয়ারা ছুটিয়ে বলল মেয়েটি।

-আগের গ্রাম্য সহজ সরল বালিকার কোনো চিহ্ন আর নেই। আমার ধারণা ছিল না যে তুমি এতটা বদলাতে পার। আর সাউথ আফ্রিকায় তোমার উপস্থিতি! স্টেইঞ্চ! মাথাতেই আসেনি।

-আমি অনেক আগে থেকে আপনাদের ফলো করছিলাম। কিন্তু কিভাবে কথা শুরু করার সাহস পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত বলেই ফেললাম বলে হেসে উঠল রুমানা।

ওর নির্মল হাসির আমি আজীবন ভক্ত। এতদিন পর সে হাসিটা বুকের বামপাশটাতে একটা পুরনো ক্ষতকে যেন বেশ তাতিয়ে দিল। স্মৃতিগুলো দলাপাকিয়ে উঠছে। সব মনে করে ভেতরের যন্ত্রণা না বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। আমাদের ঘর পাশাপাশি ছিল। ছোটবেলা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। লেখাপড়াও একসঙ্গে। ওর মা আমার আম্মুর সঙ্গে কথা বলে গাঁটছড়া বাধার কথা বলে রেখেছিল। কিন্তু ওর মানসিকতা ছিল অন্য ধাঁচের। কিছুটা বিলাসী টাইপের। মনে মনে বর হিসেবে বিদেশি কাউকে কল্পনা করতো। লেখাপড়া এবং বই পড়ার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল ওর। মাঝে মাঝে আমাকে জ্বালানোর জন্য বলতো আমি পয়সাঅলা কাউকে বিয়ে করবো। তারপর তাকে পটিয়ে বিদেশে উড়াল দেব। সত্যি সত্যি একদিন ওর মা আর বোন জামাই একরকম জোর করে বিদেশি এক ছেলের সঙ্গে তাকে বিয়ে দিল। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আমার সঙ্গে সকল যোগাযোগ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল ওর পরিবার। সে সময় আমার উপর দিয়ে কতটা ঝড় বয়ে গেছে সেটা আর মনে করতে চাই না। তারপর সাড়ে পাঁচ বছর চলে যায়, ওকে আর একবারের জন্য দেখিনি। তখন বয়স ছিল ষোল। এখন পূর্ণ যুবতি। সময় বড় অগ্রসর জিনিস।

সেলিনাকে রুমানার কাছে পরিচয় করে দিয়েছি। আমরা তিনজন একটা কপি হাউজে বসে হট কপি পান করলাম। বারবার রুমানার ফোন বাজছিল আর ও কেটে দিচ্ছিল। জানতে চাইলে, বললো ওর হাজবেন্ড ফোন করছে। বললাম ফোন উঠাচ্ছো না কেন।

কিছু না বলে তার বাসায় যাওয়ার জন্য বললে, সেলিনা ঝটপট বলে দেয়, আজ আমাদের বাড়ি যাবে আগ থেকে প্ল্যান করা। সময় পেলে তোমাদের ওখানেও যাওয়া যাবে। রুমানা আমার দিকে তাকিয়ে বিদায় নিতে চাচ্ছিল। আমি এতক্ষণ কথা বলার চে ওর চেহারাই দেখছিলাম। ও চেয়ার ছেড়ে দেয়ায় আমি আর সেলিনাও উঠে দাঁড়ালাম। আমাদের মাঝে আলাপটা ইংরেজিতে হলেও এ সময় রুমানা বলে উঠলো, আমাদের গ্যাছে যে দিন কি একেবারেই গ্যাছে, কিছুই কি নেই বাকি? রবী ঠাকুরের এ কবিতাটা তাহলে ও কী এখনও মনে রেখেছে! আমি উত্তর দেয়ার বদলে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাই। আচ্ছা যাচ্ছি। কাল দেখা হবে, বাই! বলে ও সেদিন চলে গিয়েছিল। আমি শুনতে পাইনি। আমিও তখন আনমনে বলছিলাম, আমাদের গ্যাছে যে দিন একেবারেই কি গ্যাছে, কিছুই কি নেই বাকি?

লেখক : কবি ও গল্পকার [email protected]

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গল্প,আমিন আশরাফ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist