দ্যুতিময় বুলবুল

  ০৫ মে, ২০১৭

রবীন্দ্র দর্শনে জাতীয়তাবাদ ও রাষ্ট্রীয় ভাবনা

রামচন্দ্র গুহ এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘আধুনিক ভারতের চার প্রতিষ্ঠাতা। তারা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহেরু এবং বি আর আম্বেদকর। তাদের জাতীয়তাবোধ ও রাষ্ট্রচেতনা ভারতবর্ষের মুক্তির দিগন্ত উšে§াচন করেছে। প্রবন্ধটি পড়ে এক তরুণ অঙ্কশাস্ত্রবিদ রামচন্দ্র গুহকে প্রশ্ন করেন, এই তালিকায় ‘রবীন্দ্রনাথ কেন?’ লেখকের জবাব, অবশ্যই রবীন্দ্রনাথ। কারণ, ‘রবীন্দ্রনাথ ভারতবাসীকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। জুগিয়েছেন স্বাধীনতার প্রেরণা। জাগিয়েছেন তার চেতনার রঙে, নানা বর্ণ সমাহারে। ভাসিয়েছেন তার সত্তার জ্যোতির্ময় শিখার আলোকের ঝর্ণাধারায়। রবিরশ্মির শুভ্র দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে ভারতবর্ষসহ বিশ্বময়। তবে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ ছিল সামগ্রিক অর্থে। অর্থাৎ, সর্বজনীন। একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ ও যুক্তিনির্ভর।’

রামচন্দ্র বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আধুনিক ভারতের অন্যতম স্থপতি। আর সর্বোপরি রাধাকৃষণ তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ভারতীয় রেনেসাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইউরোপীয় রেনেসাঁ থেকে মানুষের মুক্তি, সমতা, স্বাধীনতা- এমন অনেক ধারণা গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এজন্য ইউরোপীয় সভ্যতার প্রতি তার শ্রদ্ধা ও ভক্তির সীমা ছিল না। সেই ইউরোপীয় রেনেসাঁ এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাধারা।

আসলে রবীন্দ্রনাথ শুধু জাতীয়তাবাদীই ছিলেন না, তিনি তার জাতীয়তাবাদী ভাবনায় ভারতবাসীকে উজ্জীবিত করেছেন এবং আজও করছেন। তবে রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদী যেমন সত্য, একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিকতাবাদীও, যাকে বলে বিশ্বমানব। তবে তিনি উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দেননি। কারণ, এর ভয়াবহতা তিনি জানতেন। হিটলার, মুসোলিনি ছিলেন উগ্র জাতীয়তাবাদী। তাদের উগ্র জাতীয়তাবাদের পরিণতি কী, রবীন্দ্রনাথ তা প্রত্যক্ষ করেছেন। আমরাও সেটা কমবেশি জানি। রবীন্দ্রনাথ এক জাতিসত্তার সঙ্গে আরেক জাতিসত্তার অস্তিত্বের বহুমাত্রিক রূপ পরিগ্রহ করেছেন, একটি সহজ যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। প্রত্যক্ষ করেছেন সর্বব্যাপী দৃষ্টি দিয়ে।

তিনি একক নেশন বা জাতির ওপর আস্থা রাখেননি। সমাজে নানা রকম বিভক্তি বিদ্যমান থাকায় নেশন নির্মাণ সম্ভব নয়- এটাই ছিল তার অনাস্থার মূল কারণ। ন্যাশনালিজমের নাম দিয়েছেন তিনি ‘জিওগ্রাফিক্যাল ডেমন’। প্রথমদিকে তার ধারণা ছিল, ‘নেশন একটি মানস পদার্থ।’ কিন্তু পরে নেশনকে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা হিসেবে দেখেছেন, যা জনগণকে ‘যান্ত্রিক প্রয়োজনে’ সংঘবদ্ধ করে। তার ব্যাখ্যা, ভারতবর্ষে ন্যাশনালিজম খাটবে না। কারণ, ইউরোপে শাসক-শোষিতের যে ভেদ ঘটেছিল, সেটা জাতিগত বিভেদ নয়; শ্রেণিগত ভেদ। কিন্তু ভারতবর্ষে ভেদ ধর্ম ও জাতির নামে। তার মতে, দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে জাতি গঠনের চেষ্টা এসব ভেদবুদ্ধিকে আরো বাড়িয়ে দেবে। তবে এখনকার নেশন-স্টেট বা জাতি-রাষ্ট্রের ধারণাকে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে দেখতে নারাজ অনেকেই। তাদের কথা, রবীন্দ্রনাথের ধারণা সেকেলে। আবার কেউ কেউ রবীন্দ্রনাথের ভাবনাকে ‘উত্তর-আধুনিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারো কারো মতে, রবীন্দ্রনাথের নেশনবিরোধী সমালোচনায় স্টেটবিরোধী মতাদর্শ থাকলেও সেখানে স্বদেশপ্রেমের জায়গা আছে, কিন্তু ন্যাশনালিজমের নেই। রবীন্দ্রনাথ কড়া ভাষায় নেশনের সমালোচনা করেছেন, কিন্তু ততটা কড়াভাবে নো-নেশনের ছবি আঁকেননি। তিনি ঐক্যের প্রয়োজনে ভারতবর্ষে এক-রাষ্ট্রীয় শাসনের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি নো-নেশন সমাজে জনগণের উদ্ভাবনী শক্তির ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, চীন, জাপান, ইরান, তুরস্ক প্রভৃতি এ ধরনের রাষ্ট্র। আমলাতন্ত্রেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। তবে বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় ‘যৌথতার নতুন নির্মাণের’ স্তুতি করলেও মানব চরিত্রের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার রীতিও তিনি মানতে চাননি। তিনি সেই রাষ্ট্রকে মানেননি, যে রাষ্ট্র স্বৈরাচার। স্বৈরাচারী সমাজের বিরুদ্ধেও তার ধিক্কার ছিল স্পষ্ট। ব্রিটিশ যুগে রাষ্ট্র ছিল স্বৈরাচার। রবীন্দ্রনাথ তাই চেয়েছিলেন সমাজকে আলাদা করে নেবেন রাষ্ট্রের সর্বভুক ও বুভুক্ষুগ্রাস থেকে। ভারতবর্ষের ইতিহাসে সমাজই প্রধান; রাষ্ট্র নয়। এ কথা তিনি বার বার বলেছেন, খুব জোর দিয়েই।

স্বৈরাচারী রাষ্ট্রশক্তি অমর নয়; তার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী- এই বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথ কখনো হারাননি। সেজন্যই তার তাসের দেশের তাসেরা মানুষ হয়ে ওঠে, অচলায়তন ভেঙে পড়ে, মুক্তধারা বইতে থাকে এবং রক্তকরবীর সেই ভীষণ রাজারও পতন ঘটে। রবীন্দ্রনাথের ‘সভ্যতার সংকট’-এ ইংরেজ রাজত্বের অবসানের অবশ্যম্ভাবিতার যে বিশ্বাস ফুটে উঠেছে, তার সেই একই বিশ্বাস সংস্কৃতিচর্চার ক্ষেত্রেও। তার পাহাড় মেঘ হয়, নদী থাকে সতত প্রবহমান, আর মানুষ এগিয়ে চলে মুক্তির লক্ষ্যে- সব বন্ধন ছিন্ন করে। তার মতে, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। মানুষের শক্তির ওপর আস্থা তার অবিচল।

তাই তিনি মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেননি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ কিংবা বিশেষ কোনো সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেননি। রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদে কোনো বিশেষ মতাদর্শকেও শ্রেষ্ঠত্ব দেননি। তার জাতীয়তাবাদ উঠে এসেছে মানবিক চেতনা থেকে, আত্মোপলব্ধি থেকে। গান্ধীর জাতীয়তাবাদও তা-ই ছিল। কোনো ধর্ম-বর্ণ বা জাতি-গোষ্ঠীর চেতনা থেকে উদ্ভূত নয়। রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধী- দু’জনই জাতীয়তাবাদী ভাবনায় রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নয়, নৈতিক শক্তির ওপর জোর দিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী উভয়েই বিংশ শতকের ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ছিলেন। তাই অনেকে তাদের দু’জনকে তুলনামূলক আলোচনার চেষ্টা করেছেন। স্বয়ং নেহেরুও করেছেন। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট ৮০ বছর ৩ মাস বয়সে রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ হলো, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে দীর্ঘ

রোগভোগের পর। যে ঘরে তার জন্ম হয়েছিল, সেই ঘরেই মৃত্যু। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর খবর শুনে খুব দুঃখ পেলেন নেহেরু। তখন তিনি ব্রিটিশ শাসনে কারাবন্দি। তাই জওহরলাল নেহেরু দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে তার কারাগারের ডায়েরিতে লিখলেন, ‘গান্ধী ও ঠাকুর যদিও দুজনই ভারতের আদর্শস্বরূপ ও মহান ব্যক্তিত্ব, তবুও তারা একে অন্যের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। আজকের পৃথিবীর মহামানবদের মধ্যে গান্ধী ও ঠাকুর মানুষ হিসেবেও সর্বশ্রেষ্ঠ। আমার সৌভাগ্য এই যে, তাদের দুজনেরই খুব ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি।’ নেহেরু তার ডায়েরিতে আরো লিখেছেন, ‘ঠাকুর এই সময় মৃত্যুবরণ করে হয়তো ভালোই করলেন। তাকে ভারত ও সমগ্র পৃথিবীতে ঘটতে যাওয়া অনেক বিভীষিকা আর দেখতে হবে না। জীবদ্দশায় তিনি এসব যথেষ্ট দেখেছেন এবং এসব ব্যাপারে অত্যন্ত ব্যথিত ও অসুখী ছিলেন।’

১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ কৃষি-অর্থনীতিবিদ লিওনার্দ কে এলমহাস্টের সঙ্গে শান্তি নিকেতনের নিকটবর্তী সুরুল গ্রামে ‘পল্লী পুনর্নির্মাণ সংস্থা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রবীন্দ্রনাথ পরে এর নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন ‘শ্রীনিকেতন’। এই শ্রীনিকেতনের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ মহাত্মা গান্ধী পরিচালিত স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের বিদ্বান ও পন্ডিতদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে সেখানে গ্রামের মানুষদের জন্য বিনা মূল্যে শিক্ষা প্রদানের বন্দোবস্ত করেন এবং তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ জ্ঞান বিকাশের প্রয়াস নেন। ত্রিশের দশকে তিনি ভারতবর্ষের অস্বাভাবিক বর্ণবিভেদ এবং বর্ণে বর্ণে ধরাছোঁয়ার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত মতামত প্রচার শুরু করেন। তিনি এই বর্ণবিভেদের বিরুদ্ধে বক্তৃতা, কবিতা রচনা, বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে নাটক রচনা এবং কেরালার একটি মন্দিরে এই প্রথা ত্যাগের আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তার আন্দোলন পরিচালনা করেন। মূলত দলিতদের সাধারণ সমাজে অবাধ প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দেওয়াই ছিল তার লক্ষ্য।

জীবনের শেষ দশকের পুরোটা রবীন্দ্রনাথ জনসমক্ষে ছিলেন। তার জনপ্রিয়তা এই সময়ে ছিল তুঙ্গে। ১৯৩৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের বিহার রাজ্যে সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সম্পর্কে মহাত্মা গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, এটা দলিতদের বশীভূত করার জন্য ঈশ্বরের একটি প্রতিশোধ। রবীন্দ্রনাথ এই মন্তব্যের জন্য গান্ধীকে জনসমক্ষে তিরস্কার করেন। এছাড়া বঙ্গের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি এবং কলকাতায় দারিদ্র্যের প্রভাবের কারণে তিনি বিশেষ দুঃখ প্রকাশ করেন। ১০০ লাইনের একটি মিত্রাক্ষরবর্জিত কবিতায় তিনি তার এই বেদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।

রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ প্রান্তে ভারত রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মতো সাধারণ সমস্যার ভারে ভারতকে জর্জরিত হতে দেখে এবং হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘর্ষ, তাতে রাজনৈতিক দলগুলোর বাড়াবাড়ি রকমের ইন্ধন ও উস্কানি দিতে দেখেও তিনি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন। ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ তার এক ইংরেজ বন্ধু জনহিতৈষী ও সমাজসেবক লিওনার্দ ইম্পহাস্ট, যিনি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ভারতের পল্লী উন্নয়নে অবদান রেখেছেন, তাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘লাখ লাখ মানুষের ভাগ্যান্বেষণে পরাজিতমনা ব্যক্তিদের ন্যায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করার দরকার নেই। এসব মানুষের সহজাত সংস্কৃতি ও শান্তিপূর্ণ ঐতিহ্য যুগপৎভাবে তাদের ক্ষুধা, রোগ-ব্যাধি, দেশি-বিদেশি শোষণ এবং বিক্ষুব্ধ ও অসন্তোষমূলক সাম্প্রদায়িকতার অধীন করে দিচ্ছে।’ রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাত্র ৬ বছর পর, ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত বিভক্ত হলো। সেই সময় হিন্দু-মুসলিম ভয়াবহ দাঙ্গা হলো। তাতে রাজনীতিকদের উস্কানি ও ইন্ধন ছিল। রবীন্দ্রনাথ এই নৃশংস ট্র্যাজেডি দেখেননি। দেখলে তিনি কী করতেন জানি না, তবে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদে তিনি ব্রিটিশরাজের ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়, রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর অন্যতম এই জালিয়ানওয়ালাবাগের খুনিদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদ। যাদের এই ভূমিকা দরকার ছিল, সেদিন তারা সেই কাজটি করেননি। গান্ধী চুপ করে ছিলেন, চিত্তরঞ্জনসহ অন্যরাও এগিয়ে আসেননি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ চুপ থাকতে পারেননি। তীব্র প্রতিবাদ করলেন। ভারতবাসীকে বাঁচালেন তিনি, স্বৈরাচারী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে বুক টান করে একা দাঁড়িয়ে। নইলে গুলি খেয়েও যে ভারতবর্ষ মরেনি, প্রতিবাদহীনতার লজ্জায় সত্যি সত্যিই তার মৃত্যু ঘটত। তাই পরাধীন ভারতবাসীকে রবীন্দ্রনাথ দুইবার সম্মানিত করেছেন- একবার ইউরোপের দেওয়া নোবেল পুরস্কার জয় করে, আরেকবার ইংরেজদের দেওয়া নাইটহুট পরিত্যাগ করে।

গান্ধী ভারত ভাগের আগে-পরে ধর্মের নামে হিন্দু-মুসলমানের বীভৎস সহিংস দাঙ্গা দেখেছিলেন। এতে তিনি প্রচ- মর্মাহত হয়েছিলেন। দাঙ্গা থামাতে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন কলকাতা থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। নিরলস, অবিরাম। নেহেরু, প্যাটেল আর জিন্নাহ-লিয়াকতদের ভারতবর্ষ ভাগাভাগিতে তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। ভারতের ভাঙন ঠেকাতে তিনি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি। সেই সুযোগও আর ছিল না। ভারতবিভক্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। তাই রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে তিনি দূরে সরে গিয়েছিলেন। কিন্তু থাকতে পারেননি। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হওয়ার পর ছুটে এসেছিলেন। দাঁড়িয়েছিলেন অসহায় মানুষের পাশে। জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ তিনি মানেননি। কোনো রাজনীতিককে পাশে পাওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষাও করেননি। বরং ভারত ভাগে ব্যস্ত রাজনীতিকদের স্বার্থপরতা ও ক্ষমতার মোহ দেখে তিনি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। এ সময় রবীন্দ্রনাথের গান ছিল তার একমাত্র সঙ্গী, মূল প্রেরণা। ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে/ তবে একলা চলরে...’ গানটি ছিল গান্ধীজির অত্যন্ত প্রিয়। রবীন্দ্রনাথই তখন তার ধ্রুবতারা। অবশ্য এ সময় তিনি নেতাজি সুভাষকে খুব স্মরণ করেছিলেন। আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘যদি আমার অবাধ্য ছেলেটি আজ পাশে থাকত, তবে ভারত বিভক্ত হতো না...।’ কিন্তু মাত্র দুই বছর আগে সুভাষের মহাপ্রস্থান হয়েছে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই। অবশ্য এখনো অনেকেই মনে করেন, তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়নি; তিনি অন্তর্ধান করেছেন। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রবীন্দ্র দর্শন,জাতীয়তাবাদ,রাষ্ট্রীয় ভাবনা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist