নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

শুদ্ধ ভাষাচর্চায় আসে শেকড়ের খোঁজ

শুদ্ধ ভাষাচর্চা যেকোনো জাতিকে তার শেকড়ের খোঁজ দেয়। আমাদের মধুর বাংলা ভাষা জাতিসত্তার পরিচয় বহন করে। ভূখণ্ড, পতাকা, ভাষা এগুলো একটি জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ভাষার মাধ্যমেই আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। এ ভাষার ভাব আবার অঞ্চলভেদে একটু আলাদা হয়। শুদ্ধ ভাষার পাশাপাশি এসব আঞ্চলিক ভাষাও যথেষ্ট গুরুত্বের দাবিদার। আঞ্চলিক ভাষা গুরুত্বপূর্ণ বা আঞ্চলিক ভাষাকেও টিকিয়ে রাখতে হবে এর নিজস্ব গুরুত্ব বিবেচনায়।

প্রথমত, প্রথমে আঞ্চলিক ভাষাতেই শিশু বড় হয় এবং দ্বিতীয়ত, এসব আঞ্চলিক ভাষা আমাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন নাটকগুলোতে এসব আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারে নাটকের বৈচিত্র্য এবং দর্শকদের আগ্রহ লক্ষণীয়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করার কারণে নাটক দর্শকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পাবনা, রাজশাহী বা সিলেটের ভাষা ব্যবহার আজ আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। এটা প্রমাণ করে যে আঞ্চলিক ভাষা রক্ষায়ও যথেষ্ট জোর দিতে হবে। পৃথিবীর আলো দেখার পর থেকেই মা এবং আশপাশের মানুষের মুখে নানা ভাষা শুনে শিশু ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেটাই তার মাতৃভাষা।

ইংরেজি ভাষার আধিপত্যে মাতৃভাষা আজ কোণঠাসা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত পর্যন্ত ইংরেজির প্রাধান্য। প্রাধান্যের পরিমাণ এতই বেশি ইংরেজি জানলে অন্য ভাষার দরকার নেই! প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে শহীদ মিনারে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান গাওয়াটাই শেষ কথা নয়। তাদের অবদান ভুলে না যাওয়ার শপথ করলেও আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। প্রথম ভাষা দ্বিতীয় ভাষার যে বিষয় রয়েছে তার মধ্যে আজ ইংরেজি ভাষাই যেন প্রথম ভাষা আর বাংলাই হয়ে যাচ্ছে দ্বিতীয় ভাষা।

স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে আইন করা হয় ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চে। তবে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকেছে বরাবর। প্রতি বছর ঘুরে ফিরে ফেব্রুয়ারি এলে বাংলা ভাষাচর্চা এবং সর্বস্তরে প্রয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তারপর সারা বছর আবার সেই এক অবস্থা।

ভাষা প্রকাশের পর মানুষের কাজের গতি ত্বরান্বিত হয় এবং মানুষ ভাব প্রকাশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু আজ যেসব ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথবা বিলুপ্ত হওয়ার পথে সেসব ভাষাও কারো মাতৃভাষা ছিল। সঠিক চর্চা এবং ব্যবহারের অভাবে আজ তা অস্তিত্বহীন।

দেশে সারা বছর বাংলা নিয়ে চর্চা হবে। সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর করার চেষ্টা করা হবে। স্কুল-কলেজগুলোতে বাংলা ভাষা নিয়ে প্রচুর কাজ হবে। নানামুখী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই চর্চা শুদ্ধভাবে এগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মাথার ভেতর ইংরেজির গুরুত্ব মন্ত্রের মতো না ঢুকিয়ে দিয়ে বাংলার গুরুত্ব এবং দেশপ্রেম ঢুকিয়ে দিতে হবে। শুদ্ধ অন্তর দিয়ে ভাষা আয়ত্ত করতে চাইলে তা সম্ভব। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের মহান আত্মত্যাগ, সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি এসব কিছুই বাংলাকে নিয়ে গর্ব করার মতো যথেষ্ট।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বাংলাভাষা চর্চা,শুদ্ধ ভাষা,ভাষাচর্চা,মাতৃভাষা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close