সেলিনা জাহানের কবিতা
আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত
সে তার জীবন নিয়ে ভালো আছে, সুখে আছে এবং
এ ভালোলাগা সংঘটিত হচ্ছে আমাকে ছাড়াই
আমি তাকে ছাড়া ভালো থাকি না বলে
পরগাছার মতো বেঁচে আছি।এখন তো ধূমপানের মতো সে আমার বদ-অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে ছাড়তে চাইলেও পারি না।
কেউ কি আছেন, আমাকে একটা সুপরামর্শ দিতে পারেন?
যেমন করেই হোক চোখের সামনে থেকে
তার মৃদু হাসি সরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন প্লিজ
এই অনাকাঙ্খিত মানসিক অবস্থা
ব্যাহত করছে আমার গদ্য লেখার পটভূমি।একদা তার নামে আমি একটি শহর লিখে দিতে চেয়েছিলাম
যে শহরের প্রতিটি বাড়ির সামনে
শিউলি ফুলের গাছ লাগানো থাকবে বাধ্যতামূলক
যাতে অন্তত আশ্বিন এলে সে আমার প্রতি ঝুঁকে থাকে
নুয়ে পড়া শিউলির ডালের মতো
শরতের জোছনায় হাঁটতে হাঁটতে
আমার গায়ের গন্ধের সাথে যেন শিউলির সুগন্ধের মিল খুঁজে পায়
এবং শিশিরে মাখামাখি শিউলির পাপড়ির মতো
আমার মনের কোমলতা তাকে ভাবিয়ে তোলে।যাই হোক, সেই শহরের নকশা আঁকা
আপাতত বাদ দিয়েছি, আমার এখন অনেক কাজ
আর তার বেশিরভাগই ব্যক্তিগত।
সময়ের সাথে চলছে এক জরুরি আলোচনা
এ আলোচনা সফল হলে আমি পাবো
অগণিত পায়রার মালিকানা, সাদা সাদা পায়রার ঝাঁক
নীল আকাশে রোদ মাখবে, বৃষ্টি ছোঁবে ইত্যাদি ইত্যাদি।তাকে নিয়ে ভাববেন না তো, সে ভালো আছে, সুখে আছে
তাকে দেখলেই বুঝবেন, ফুরফুরে হাসি আর
জ্বলজ্বলে চোখ, যখন তখন নোট করছে হিসাবের খাতায়
কি সব, আমি ওসবের খবর রাখি না
আমি এখন অনেক ব্যস্ত, তাকে ছাড়া ভালো থাকার
ভীষণ চেষ্টায়, আমি এখন ভীষণ ব্যস্ত।
বাউণ্ডুলের জন্য রাতজাগা
আবার রাত্রি ঘন হয় চোখের ভেতর
আবার আমার পথ থমকে যায় মাঝপথে।
বৃষ্টিকে ভালোবাসি বলেছিলাম একদিন, মনে আছে
কিন্তু, অন্ধকার ভালোবেসেছিলাম কিনা কখনো
মনে পড়ছে না।ভয় পেলে সেই কিশোরী বেলা থেকেই
একটি কেমন হাত খুঁজতাম
যার আঙুলে আঙুল লাগতেই জ্বলে উঠবে নিরাময় আলো।
হাতটি এখন কোথায় আছে কেই বা জানে?
আমার আজ ভয় লাগছে।যে পাখিটা সবার আগে সূর্য দ্যাখে
তার দুটি চোখ অন্ধ হলে কার তাতে কি যায় বা আসে!
বিজন বনের নীরব ভালো
বিষ মাখা তার ছলের চেয়ে।
ছল করে আর কি হবে তার
আমি কি আর আসবো ফিরে?ভালোবাসায় বসত করি, তা না হলে প্রাণে মরি,
প্রাণটা তোমায় দিতে পারি
ও আর বলো এমনটা কি?
আমায় তুমি মনটা দিও, তাকে নিয়েই ওপাড় যাবো।
তোমার দেহে রেখে যাবো আমার বুকের হাড় দুখানি।
এ কেমন প্রেম
অভিশাপ দেবার মতোে
এতটুকু ঘৃণাও যে জুটাতে পারি না
এ কেমন প্রেম আমার?
প্রেম নিয়ে চলে না শিকল শিকল খেলা
তোর আকাশ, আর আকাশ ভরা রোদ বৃষ্টি
অবারিত ছিল সব, কাহিনির শুরু থেকে শেষ অব্দি
তবু কেনো ছটফটানি কমেনি?
কমেনি ডানা ঝাপটানো অস্থিরতা?
তোর আকাশের একটি কোনাও তো চাইনি
চাইনি, দলিল করে দে দুশতাংশ ভূখণ্ড
তোর স্বেচ্ছাচারিতার এক পাশ থেকে
তবু তোর মন টিকলো না
মনের এক আজব অসুখে ভুগে ভুগে
তুই জানি কেমন হয়ে গেছিস।
বন জঙ্গলে ঘুরে ঘুরে, বাড়ির পথটাও ভুলে গেছিস
সেই ভুল পথের ভুল কিনারে
আমার তবু ফুরায় না পথ চাওয়া।
আমি তোর মতো কঠিন শব্দোপমায়
পদ্য লিখতে জানি না
জানি না আউলা বাউলা কষ্ট চেপে দেশান্তরী কেমন করে হয়।
আমি শুধু চোখের জলে ভিজতে জানি, একেলা, একা
ভিজাতে জানি না, তোরে...লেখক : ভয়েস আর্টিস্ট [email protected]
পিডিএসও/হেলাল