আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ

  ২৮ নভেম্বর, ২০১৮

বিলীন হচ্ছে পানাম নগরী!

সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের প্রাচীন পুরাকীর্তির পানাম নগরী সুবর্ণগ্রাম। হাজার বছরের প্রাচীন পানাম নগরী সুবর্ণগ্রাম ছিল পূর্ব বাংলার অন্যতম রাজধানী ও নদীবন্দর। এই সুবর্ণগ্রামেই তের শতকের স্থানীয় হিন্দু রাজা দনুজমাদব দশরথদেব তার শাসনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।

বঙ্গ অঞ্চল মুসলিম শাসনে আসার পর থেকে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত সুবর্ণগ্রাম সোনারগাঁ ছিল স্বাধীন সুলতানি বাংলার অন্যতম রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। ঔপনিবেশিক সময়কালেও এই এলাকায় বাণিজ্যিক, আবাসিক, ধর্মীয়-কেন্দ্রিক স্থাপত্যকর্ম নির্মিত হয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারক পানাম নগরী সুবর্ণগ্রাম সোনারগাঁ মধ্যযুগে মুসলিম সুলতানদের কাছে এবং বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অবারিত আর্কষণ, অনুপম স্থাপত্যশৈলী প্রাচীন ঐতিহ্যের বিরল স্মৃতি বিজড়িত স্থান পানাম নগরী। পানাম নগরীর দুই পাশে গাঢ় লাল রঙের ছোট ছোট ইট দিয়ে তৈরি পুরাতন ইমারতগুলো প্রাচীন কালের গৌরবময় দিনের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান সোনারগাঁয়ের।

পর্যটন গবেষকদের মতে, সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নাম ছিল সুবর্ণবিথী বা সুবর্ণগ্রাম। যা পরবর্তীতে সোনারগাঁ হিসেবে পরিচিতি পায়। তৎকালীন সময়ে মেঘনা, শীতলক্ষ্যা, ব্রহ্মপুত্র তিনটি নদী পরিবেষ্টিত থাকায় এলাকাটি বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে উন্নত ছিল। সেজন্য অনেক রাজা, বাদশাহ, সুলতান, জমিদার ও সওদাগর মিলে সোনারগাঁয়ে বাংলার রাজধানী গড়ে তুলেছিলেন।

ইবনে বতুতা ১৩৪৫-১৩৪৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সোনারগাঁকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী রূপে বর্ণনা করেন। তিনি চীন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে সুবর্ণগ্রামের সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। চীনের পরিব্রাজক মাহুয়ান ১৪০৬ খ্রিষ্টাব্দ সোনারগাঁকে একটি বাণিজ্যিক শহর হিসেবে দেখতে পান। পরিব্রাজক ফাহিয়েন ১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দে বহু পুকুর, পাকা সড়ক ও বাজার সমৃদ্ধ সুরক্ষিত এলাকা এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্ররূপে পানামকে উল্লেখ করেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজরা এখানে নির্মাণ করে ছিল নীলকুঠি, যা আজো কোম্পানির কুঠিবাড়ি নামে পরিচিত। জমিদার এবং ব্যবসায়ীরা এখানে রাস্তার দুই পাশে আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করেছিলেন। তাছাড়া পানাম নগরীতে ছিল ট্রেজারি, টাঁকশাল, অস্ত্রাগার, নীহারিকা, রেস্টহাউস এবং আরো অনেক স্মৃতি বিজড়িত ইমারত। রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধভাবে চুন-সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ইমারতগুলো সুনিপুণ হাতে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সঠিক সংরক্ষণের অভাবে প্রাচীন পুরাকীর্তির সব নিদর্শনই দিনের পর দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

পানাম নগরীর প্রাচীন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কর্মরত ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পানাম নগরীতে মোট ৫২টি পুরাতন ইমারত রয়েছে। জরাজীর্ণ এসব ইমারত সংস্কার করার জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরে ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন স্থাপনাগুলো পুনরায় সংস্কারের জন্য ইয়াংগুন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের কথাবার্তা চলছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক আলতাফ হোসেন জানান, শিগগিরই পুরাতন সব ইমারত সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পানাম নগরী,পানাম,প্রাচীন পুরাকীর্তি,সোনারগাঁ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close